হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর - পুরাতন ছবি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন টার্মিনাল-৩’র কাজে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পদে ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জামানতের কথা বলে এ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

কয়েক ধাপে দেড় শতাধিক চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে এ টাকা আত্মসাৎ করেছে দর্পণ গ্রুপ নামের একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান। ভুক্তভোগীরা ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। 

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ভুয়া ওই প্রতিষ্ঠানের তিন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

• প্রায় দেড়শ চাকরিপ্রত্যাশীকে ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া হয়
• ভুক্তভোগীরা ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন 
• তিন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)

গ্রেপ্তাররা হলেন- ভুয়া দর্পণ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম সোহাগ (৫২), ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেনা জহির (৫০) ও ম্যানেজার মিন্টল রায় ওরফে অপূর্ব রায় (২৮)।

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার কানিজ ফাতেমার নির্দেশ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতারকদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। তাদেরকে কোর্টে চালান করা হয়েছে।

কানিজ ফাতেমা বলেন, ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি ‘Samsung’ গ্রুপের নামে একটি ভুয়া ওয়ার্ক-অর্ডার প্রস্তুত করে তাদের অফিসের সামনে ডিজিটাল ব্যানারে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩তে দক্ষ ও অদক্ষ লেবার ও সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়া হবে’ এমন একটি বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে রাখে। এমন চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেখে চাকরিপ্রত্যাশী ভুক্তভোগী অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে।

সিআইডি’র এ কর্মকর্তা বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে শ্রমিক পদের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং সুপারভাইজার পদের জন্য এক লাখ টাকা করে নেয় দর্পণ গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডি। ১০০ থেকে ১৫০ চাকরিপ্রত্যাশী টাকা দিলে তাদেরকে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীরা নিয়োগপত্রে লেখা তারিখে যোগদান করতে না পেরে দর্পণের অফিসে গিয়ে যোগদানের বিষয়ে আলাপ করলে প্রতারকরা তাদের অপেক্ষা করতে বলে ঘুরাতে থাকেন।

পরে গ্রেপ্তারদের দেওয়া নিয়োগের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩তে চাকরি দেওয়ার জন্য অভিযুক্তদের কোম্পানি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে ‘SAMSUNG’ কোম্পানি ওয়ার্ক-অর্ডার দেয়নি।

এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলে জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।

করোনা টেস্টের কথা বলে আরও ৫ হাজার করে টাকা নেয়। পরে আবারও ঘুরাতে থাকে।

ভুক্তভোগী সুজন মিয়া

সংবাদ সম্মেলন শেষে উপস্থিত চাকরিপ্রত্যাশী ভুক্তভোগী চাঁদপুরের বাসিন্দা সুজন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে চোখে পড়ে সরকার মার্কেটের তিন তলায় ডিজিটাল ব্যানার লাগানো। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। আগ্রহী হয়ে কথা বলতে যাই। দর্পণ গ্রুপ নামের ওই অফিস থেকে জানানো হয়, সুপারভাইজার এক লাখ, অদক্ষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা দিলেই কেবল চাকরি হবে। আমরা তিনজন দু’দিন পর যাই। তারা ভাইভা নেয়। গত ৩০ নভেম্বর আড়াই লাখ টাকা নিয়ে তিনজনকে ভুয়া নিয়োগপত্র দেয়। এরপর ঘুরাতে থাকে। নভেম্বর মাস চলে গেলেও চাকরি হয় না। আবার করোনা টেস্টের কথা বলে আরও ৫ হাজার করে টাকা নেয়। পরে আবারও ঘুরাতে থাকে। আমাদের সন্দেহ হলে সবাই বিমানবন্দরে যাই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান ওয়ার্কপারমিটই পায়নি। তারা প্রতারকচক্র।

এক লাখ টাকা দেই। ১৫ দিন পর ফিটনেস টেস্টের জন্য আবার ৫ হাজার টাকা নেয়। এরপর ঘুরাতে থাকে।

ভুক্তভোগী অনিক

আরেক ভুক্তভোগী মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার অনিক। তিনি বলেন, জুলাই মাসে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি, শাহজালাল বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন টার্মিনাল-৩’র কাজের জন্য সুপারভাইর নেবে। আগ্রহ নিয়ে দর্পণ গ্রুপ অব কোম্পানির অফিসে যাই। সুপারভাইজার পদে ২৪ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার কথা জানায়। এজন্য একলাখ টাকা জামানত হিসেবে চায়। ২/৩ মাসের মধ্যে চাকরিতে যোগদান করতে পারব বলে জানায় তারা। পরে আমি সানজিদা ও অপু নামে দু’জনের হাতে এক লাখ টাকা দেই। ১৫ দিন পর আবারও যোগাযোগ করি। তখন মেডিকেল ফিটনেসের জন্য আবারও পরীক্ষা বাবদ ৫ হাজার টাকা নেয়। এরপর ঘুরাতে থাকে। কিন্তু টাকাও ফেরত পাই না, চাকরিও দিচ্ছে না। সন্দেহ হলে বিমানবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি দর্পণ গ্রুপ একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজের কোনো পারমিশন নেই। তখন বাধ্য হয়ে সিআইডি’র শরণাপন্ন হই।

জেইউ/এইচকে