ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছেন, সাংবাদিকরা কেবল ঘটনার পেছনে ঘুরবেন না। ঘটনার গভীরে যাবেন। কী ঘটতে যাচ্ছে সেটার আভাস দেবেন। আমরা জানি সাংবাদিকরা এখন কী বিপদের মধ্যে রয়েছেন। তাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এখন ঐক্য দরকার। সকল পেশাজীবীদের মধ্যে ঐক্য থাকা দরকার। 

রোববার (২৬ অক্টোবর) বরেণ্য সাংবাদিক, শিক্ষাগুরু আতাউস সামাদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদ সভার আয়োজন করে। স্মরণসভায় প্রথমবারের মতো আতাউস সামাদ স্মৃতি পুরস্কার ২০২১ পান বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক এবিএম রফিকুর রহমান।

তিনি বলেছেন, পুলিশদের অ্যাসোসিয়েশন হয়েছে, চিকিৎসকদের অ্যাসোসিয়েশন হয়েছে, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের লোকেরা বিবৃতি দেন এবং সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের অ্যাসোসিয়েশন আছে। কোনো অন্যায় হলে তারাও বিবৃতি দেন।

রাষ্ট্র ও গণমাধ্যমের মালিকরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করছে উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা দেখছি, শীর্ষ সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে অপমানজনক তৎপরতা চলছে। আমরা মনে করি আপনাদের (সাংবাদিকদের) ঐক্য স্থায়ী হওয়া দরকার।

বরেণ্য সাংবাদিক আতাউস সামাদের কথা উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। আমি তার বিবর্তনটা দেখেছি। তার সাংগঠনিক ক্ষমতার বিবর্তনটা আমি দেখেছি। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় পাকিস্তান অবজারভারের সংবাদদাতা ছিলেন। তিনি আরেকটা বড় কাজ করেছিলেন। সেটা হচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠি মওলানা ভাসানীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ‌আমরা তাকে দেখেছি ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের সময়, একাত্তরের যুদ্ধের সময় এবং এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি কারাভোগ পর্যন্ত করেছেন, এটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

করোনাভাইরাসকে পুঁজিবাদী আক্রমণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজকে আফগানিস্তানের নেতা হচ্ছে তালেবান। তালেবানকে তো আমরা প্রতিষ্ঠান বলতে পারি না, এটা একটা রোগ। সেই রোগটা হচ্ছে ফ্যাসিবাদ। আজকের সারা পৃথিবীতে ফ্যাসিবাদ বিরাজ করছে চরম আকারে। এটা সবচাইতে মর্মান্তিক। 

সাংবাদিক আতাউস সামাদের কথা স্মরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, আতাউস সামাদের মতো সাংবাদিকরা আমাদের দৃষ্টান্ত। আতাউস সামাদ যেভাবে ভেতরের খবর তুলে আনতেন, সেভাবে খবর তুলে আনা দরকার। তার প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি অত্যন্ত গর্বিত যে আতাউস সামাদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ছিল।

স্মরণসভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আতাউস সামাদ যখন একটি রিপোর্টের আইডিয়া নিয়ে কাজ করতেন, সেটি ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত তিনি শান্তি পেতেন না। তিনি খবরটা বের করতে চাইতেন এবং তা করতেন। 

আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, আতাউস সামাদ সত্যের ওপর ভিত্তি করে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি সবদিক থেকে তথ্যকেই মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি যে সত্যান্বেষী এটা সবচেয়ে বড় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তিনি যেকোনো সংবাদ কয়েকবার পরীক্ষা না করে ছাড়তেন না। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আতাউস সামাদ একজন অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে সংবাদ পরিবেশন করেছেন।

স্মরণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কবি হেলাল হাফিজ, সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, শামসুল হক জাহিদ, মুন্নী সাহা প্রমুখ।

এমএইচএন/এইচকে