এয়ার ইন্ডিয়ার একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে টিকাগুলো বাংলাদেশে এসেছে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে পৌঁছেছে ভারতের উপহার হিসেবে দেওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা। বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১২৩২ ফ্লাইটে টিকাগুলো বাংলাদেশে আসে।

এর আগে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা বেজে ২৮ মিনিটে ফ্লাইটটি মুম্বাই থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, টিকাগুলো ৮ নম্বর গেট দিয়ে সরাসরি ফ্রিজারের মাধ্যমে তেজগাঁও হেলথ কমপ্লেক্সের ইপিআই সেন্টারে চলে যাবে। পদ্মায় আনুষ্ঠানিকভাবে এগুলো হস্তান্তর করা হবে। মূলত টিকাগুলো রিসিভ করে কোল্ড স্টোরে রাখা হবে।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, টিকা হাতে পাওয়ার পরে দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী এগুলো হস্তান্তর করবেন।

টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলকভাবে বাছাই করা স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিকসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মোট ২০ থেকে ২৫ সদস্যকে এ টিকা দেওয়া হবে। অনলাইনের মাধ্যমে রাজধানীর কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২৭ বা ২৮ জানুয়ারি ২০ থেকে ২৫ জনকে দেওয়ার মাধ্যমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে। এরপর চারটি হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে।

নির্ধারিত এ হাসপাতালগুলো হলো- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল।

বেসরকারি হাসপাতাল টিকা পাবে কি-না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে আমরা আপাতত টিকা দিচ্ছি না। প্রথম ধাপে শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালে এ টিকা দেওয়া হবে। প্রতিটি ভ্যাকসিন টিমে ২ জন ভ্যাকসিনেটর এবং নার্স, স্যাকমোসহ ৪ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। এ টিমগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখবে। তাদের এসব বিষয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দেবো।

টিকাগুলো তেজগাঁও হেলথ কমপ্লেক্সের ইপিআই সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের বাইরে কোনো টিকা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে না। কারণ এটি নতুন টিকা, বাইরে প্রয়োগ করলে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা হাসপাতাল সুবিধা দিতে পারবো না। আর সেসব কারণেই হাসপাতালের বাইরে কোনো টিকা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে না।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, টিকা দেওয়ার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে অনাস্থা দূর করার জন্য গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অহেতুক গুজব, ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি না করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, টিকা নেওয়ার পরে গ্রহীতাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য চিকিৎসক নিয়োজিত থাকবে। তাদের টিকা দেওয়ার পর দশ থেকে পনের মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তাদের সবাইকে টেলিমেডিসিনের আওতায় নেওয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, যেহেতু মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে অনলাইনে অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করে টিকা গ্রহণ করবে, সে ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন সেবা দিতে অসুবিধা হবে না।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড নামে বাজারজাত করছে সেরাম ইনস্টিটিউট। গত শনিবার থেকে এ টিকা ভারতের মানুষকে দেওয়া শুরু হয়েছে। উপহারের বাইরে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনটি বাণিজ্যিকভাবে তিন কোটি ডোজ পাওয়ার জন্য গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুসারে প্রথম ধাপে প্রত্যেক মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা। এ মাসেই যার প্রথম চালান আসার কথা রয়েছে।

এআর/এমএইচএস