বইমেলা ফেব্রুয়ারি নাকি মার্চে, সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর হাতে
২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সম্ভাব্য তিনটি তারিখের প্রস্তাবনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো প্রস্তাবনায় বইমেলার জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৭ মার্চ ও ২৭ মার্চ— এ তিনটি তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও মেলা করার তারিখ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত পায়নি মন্ত্রণালয়।
তবে, আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বইমেলা করার চূড়ান্ত তারিখ পাওয়া যাবে। এরপর শুরু হবে মেলার আনুষঙ্গিক কাজ— বলছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একুশে বইমেলার ফাইল পাঠানো হয়েছে। সেখানে করোনাভাইরাসের মধ্যে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে মেলার আয়োজন করা যায় তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া মেলার জন্য প্রকাশক, বাংলা একাডেমি ও মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় নির্ধারণ করা তিনটি তারিখের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে একটি তারিখ চূড়ান্ত করে দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দিন ধার্য করলে সেই অনুযায়ী মেলার ডিজাইন ও স্টলের সংখ্যা এবং অন্যান্য বিষয় বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বসে ঠিক করবে।
বিজ্ঞাপন
অমর একুশে বইমেলার ফাইল গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে আমরা তার মতামত জানতে পারব
সচিব মো. বদরুল আরেফীন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়
বদরুল আরেফীন আরও বলেন, যেহেতু করোনাভাইরাসের কারণে এবার পয়লা ফেব্রুয়ারি মেলা হচ্ছে না। তাই আমরা সম্ভাব্য তিনটি তারিখ ঠিক করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবনা হিসেবে পাঠিয়েছি। তারিখ তিনটি থেকে প্রধানমন্ত্রী যেটি মেলার জন্য ঠিক করবেন, সেই তারিখে মেলা শুরু হবে।
'অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১'- এর পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মেলা করার তারিখ ঠিক করতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখন তারা (সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়) চূড়ান্ত তারিখ জানালে আমরা সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেব।
মার্চে যদি মেলা হয়, তাহলে একরকম প্রস্তুতি নিতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে হলে আরেক রকম। মার্চে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখে ওই সময় মেলার প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের
জালাল আহমেদ, পরিচালক, বাংলা একাডেমি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা হওয়ার সম্ভাবনা একদম ক্ষীণ। ৭ মার্চ থেকে মেলা শুরু হতে পারে। সেটাকে সামনে রেখে আমরা পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, এবারও একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা হবে। তবে গতবারের তুলনায় এবার মেলায় স্টলের সংখ্যা কম হবে। মেলায় দর্শনার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রেও কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে। যাতে মেলার ভেতরে করোনারোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া প্রকাশকদের প্রস্তাব অনুযায়ী স্টল বরাদ্দের টাকাও কিছুটা কমানো হতে পারে।
এবার মেলায় স্টলের সংখ্যা কিছুটা কম হতে পারে। তবে বেশি কমার সুযোগ নেই। মেলার ভেতরে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি ঠিক রাখা যাবে, তার পরিকল্পনাও আমার নিয়েছি
জালাল আহমেদ, পরিচালক, বাংলা একাডেমি
প্রকাশনা সংস্থাগুলো বলছে, করোনাকালীন ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়। অন্যান্য খাতের ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা পেলেও প্রকাশকরা কিছুই পাননি। তাই এবার মেলায় নামমাত্র মূল্যে স্টল বরাদ্দ এবং স্টলের সংখ্যা কমানোসহ ১২ দফা প্রস্তাব বাংলা একাডেমিকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এবার মেলা আয়োজন কমিটিতে প্রকাশকদের প্রতিনিধি রাখা এবং মেলায় আগত দর্শনার্থীদের প্রবেশে ফ্রি রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রাখারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
অন্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবারের মেলায় নামমাত্র মূল্যে স্টল বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কারণ আমরা করোনায় কোনো প্রণোদনা পাইনি। এর বাইরে আমরা স্টলের সংখ্যা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কারণ প্রতি বছর মেলায় আমরা এমন কিছু প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দিতে দেখি যারা সারা বছর কোনো বই প্রকাশ করে না। শুধু মেলার সময় বিদেশি বই কপি করে এবং বিদেশি লেখকদের বই বিক্রি করে। কিন্তু বইমেলার শর্ত হচ্ছে, দেশীয় লেখকদের প্রকাশিত বই বিক্রি করতে হবে। এজন্য এবারের মেলায় অপেশাদার ও বাইরের বইয়ের প্রকাশকরা যাতে স্টল বরাদ্দ না নিতে পারেন, আমরা সেই প্রস্তাব দিয়েছি।
আমরা চাই মার্চের মধ্যে মেলার আয়োজন হোক। এরপর বৃষ্টির সময়। সেসময় মেলা হলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে
মাজহারুল ইসলাম, স্বত্বাধিকারী, অন্য প্রকাশ
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে থাকছে ১০০ বই
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, এবারের বইমেলায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০টি বই করার চিন্তাভাবনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এখন পর্যন্ত ২৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। বাকি বইগুলোর মধ্যে ২০টির মতো প্রকাশিত হবে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রকাশ করা বইয়ের তালিকা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে বাংলা একাডেমি।
বাংলা একাডেমির পরিচালক মোবারক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবারের মেলায় বঙ্গবন্ধুর ওপর কোন কোন বই প্রকাশ হবে, তার তালিকা আমার মোটামুটি চূড়ান্ত করে ফেলেছি। এবার মেলায় বঙ্গবন্ধুর ওপর ১০টির বেশি বই প্রকাশিত হতে পারে।
বাংলা একাডেমির তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। নতুন বই প্রকাশিত হয় চার হাজার ৯১৯টি। বাংলা একাডেমি প্রকাশ করে ৪১টি নতুন বই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি অংশে মিলিয়ে ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট বা স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা, একুশে বইমেলা হিসেবেও পরিচিত। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর অন্যতম এটি। প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এ মেলার আয়োজন চলে। বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে এটি অনুষ্ঠিত হলেও ২০১৪ সাল থেকে একাডেমির মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও এটি সম্প্রসারণ করা হয়।
রেওয়াজ অনুযায়ী বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্যোগ নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।
এএইচআর/এমএআর/ওএফ