চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও শাপলা মিডিয়া নামের একটি প্রযোজনা সংস্থার মালিক মো. সেলিম খানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে জেলার চার মৎস্য আড়তের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে দুই আড়ত মালিকের আজ দুদকে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা আসেননি। 

দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান সই করা নোটিশে বাকি দুজনকে আগামীকাল ২৩ সেপ্টেম্বর হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।  

দুদকের নোটিশে আজ চাঁদপুর সদরের ওয়্যারলেস বাজারের মা মৎস্য আড়তের মালিক ও চান্দ্রা বাজারের ভাই ভাই মৎস্য আড়তের মালিককে দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা কেউই আজ হাজির হননি। এছাড়া চাঁদপুর সদরের ৮ নং বাগাদি ইউনিয়নের মেসার্স ভাই ভাই মৎস্য আড়তের মালিক ও লক্ষ্মীপুর বাজারের মালিককে আগামীকাল (২৩ সেপ্টেম্বর) হাজির হতে বলা হয়েছে।

দুদকের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র জানায়, সেলিম খান সম্প্রতি তার সম্পদের বিবরণে মৎস্য চাষের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করতেই তাদের তলব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ওই আড়ত মালিকদের হিসাবের যাবতীয় খাতার অনুলিপিসহ হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়। 

২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেলিম খান ও তার স্ত্রী শাহানারা বেগমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছিল দুদক।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেলিম খানের আয়কর বিবরণীসহ বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই শেষে তার পারিবারিক ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যায় ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা ও ঋণসহ তার মোট আয় পাওয়া যায় ৬১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। তবে দুদকে তথ্য রয়েছে যে,সেলিম খানের মোট যে সম্পদ রয়েছে তার মূল্য ২০ কোটি ৬৯ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৫ টাকা। কিন্তু এ সম্পদের বৈধ কোনো উৎস ও রেকর্ডপত্র নেই।

দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া সেলিম খানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- চাঁদপুর সদর উপজেলায় ৪.২১ একর কৃষি ও অকৃষি জমি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ১০ তলা বাড়ি, ঢাকার কাকরাইলে ৪ তলা একটি বাড়ি ও ঢাকার কাকরাইলের একটি ফ্ল্যাট। এসব সম্পদের আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৪০ টাকা।

অন্যদিকে তার দুটি জিপ গাড়ি, চারটি ড্রেজার, একটি শটগান, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র রয়েছে; যার মূল্য ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে ২ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ২৪৫ টাকাসহ তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ধরা হয়েছে মোট ৫ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৫ টাকা।

এছাড়া তিনি ‘শাহেনশাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে ১ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ‘প্রেম চোর’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণে ২ কোটি ৭ লাখ টাকাসহ ৬ থেকে ৭টি সিনেমা নির্মাণে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন বলে বিভিন্ন নথিপত্রে উঠে এসেছে। এরও কোনো বৈধ উৎস এখনো পাননি দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

আরএম/এনএফ