স্বরাষ্ট্রের মতামত-নির্দেশনার অপেক্ষায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সোহেল রানাকে ফেরাতে দুই দফা চিঠিতেও সাড়া নেই দিল্লির
গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বরখাস্ত হওয়া বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে এখনও সাড়া দেয়নি ভারতের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। ইতোমধ্যে দুই দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাড়া না মেলায় আবারও দিল্লির এনসিবি বরাবর চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখা থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের এনসিবিকে চিঠি পাঠানো হয়। ৭ সেপ্টেম্বর আরেক দফায় অতিরিক্ত তথ্য সংযুক্ত করে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি দিল্লির এনসিবি।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখা থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের এনসিবিকে চিঠি পাঠানো হয়। ৭ সেপ্টেম্বর আরেক দফায় অতিরিক্ত তথ্য সংযুক্ত করে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি দিল্লির এনসিবি
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদরদফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গত ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অবস্থিত এনসিবিকে সে দেশে গ্রেফতার ঢাকার বনানী থানার পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানাকে (সাময়িক বরখাস্ত) ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাড়া না মেলায় আবারও ৭ সেপ্টেম্বর আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনও সাড়া পাওয়া যায়নি। আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই সাড়া মিলবে। তারাও এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছেন।’
এর আগে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, যেহেতু সোহেল রানা সেখানে (ভারতে) গ্রেফতার হয়েছেন, সে দেশের আইনি বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, বাংলাদেশ পুলিশ টু ভারতের পুলিশ, সেটি করছি। তবে সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।
এ মুহূর্তে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ কারণে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে দেশে অবস্থান করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত ও বরখাস্ত হওয়া বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সেখানে মামলাও হয়েছে। এসবই আমরা জেনেছি। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশেও মামলা হয়েছে। বাহিনী থেকে বরখাস্তও হয়েছেন সোহেল রানা। তাকে ফেরত আনার বিষয়ে অবশ্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত ও নির্দেশনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
‘যদিও আমরা স্বরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সাড়া পাইনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মতামত ও নির্দেশনা দিলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে’— বলেন ওই কর্মকর্তা।
গত ৩ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্দায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়েন সোহেল রানা। পরদিন ভারতীয় গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বিএসএফের হাতে আটক সোহেল রানা গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। বনানী থানার এ পুলিশ পরিদর্শকের বোন ও ভগ্নিপতি ই-অরেঞ্জ পরিচালনা করতেন।
গত ১৭ আগস্ট অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। ওই সময় তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। গ্রাহকের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। আসামি করা হয় ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, আমানউল্ল্যাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ ও সোহেল রানাকে।
গত ১৭ আগস্ট অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। ওই সময় তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। গ্রাহকের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়
শুরু থেকেই ই-অরেঞ্জের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন সোহেল রানা। তবে ‘অরেঞ্জ বাংলাদেশ’ নামের প্রতিষ্ঠান খুলতে নেওয়া টিআইএন সনদে পরিচালক হিসেবে তার নাম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিভিন্ন সময়ে আড়াই কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা অপরাধমূলক একাধিক কাজে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন বিএসএফের জিজ্ঞাসাবাদে। ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, সম্ভবত গা ঢাকা দেওয়ার লক্ষ্যে ভারতে প্রবেশ করেন তিনি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বনানী থানার পরিদর্শক শেখ সোহেল রানার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় হওয়া প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর অনুমতি চেয়ে গত রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কাছে আবেদন করেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান। তার আগেই তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান এবং ভারতে গ্রেফতার হন।
জেইউ/এমএআর/