অ্যাপে নয় খেপেই চলছে রাইড শেয়ারিং
রাজধানীতে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনের কার্যক্রম প্রথমে শুরু হয় অ্যাপ ভিত্তিক সেবা হিসেবে। এরপর নগরবাসীর কাছে এ সেবা বেশ জনপ্রিয়তা পায়। শুরু থেকে ‘পাঠাও’ ও ‘উবার’-র মতো বেশ কয়েকটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান রাজধানীতে সেবা দিয়ে আসছে। রাইড শেয়ারিং চালুর এক বছর পর থেকেই ধীরে ধীরে এ সেবায় নানা পরিবর্তন আসতে থাকে। অন্যদিকে বাড়তে থাকে যাত্রীর সংখ্যা, তেমনি বাড়তে থাকে রাইডারের সংখ্যা। যাত্রী আকর্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও দিতে থাকে নানা অফার।
এর মধ্যেই মুখথুবড়ে পড়েছে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কার্যক্রম। অ্যাপকে পাশ কাটিয়ে রাইডাররা শুরু করেন ‘খেপে’ রাইড শেয়ারিং। ফলে আগের মতো আর অ্যাপ ব্যবহার করে সেবা নিতে পারছেন না অনেকে। রাজধানীর সর্বত্র এখন রাইড শেয়ারিং সেবা চলছে চুক্তিভিত্তিক। যাত্রীরা অ্যাপের মাধ্যমে যেতে চাইলেও রাইডাররা যেতে চান না বলে অভিযোগ রয়েছে। অ্যাপে না যাওয়ার অন্যতম কারণ চুক্তিভিত্তিক রাইডে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যায়।
বিজ্ঞাপন
চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবার কারণে প্রতিষ্ঠিত রাইড শেয়ারিং কোম্পানির অ্যাপ ব্যবহারে যাত্রীরা আর আগ্রহ পাচ্ছেন না। কারণ হিসেবে অ্যাপে রাইডার কল করলে আগের মতো সাড়া না পাওয়ার কথা বলছেন যাত্রীরা।
এদিকে চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ার করতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে মোটরসাইকেল রাইডারদের জটলা দেখা যায়। তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীকে ‘ভাই যাবেন নাকি’ বলে ডাক দিতে দেখা যায়।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, লিংক রোড ও গুদারাঘাট এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে যাত্রী ও রাইডারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং সেবা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী ছিল। কিন্তু রাইড শেয়ারিং সেবা চুক্তিভিত্তিক হওয়ায় একদিকে যেমন তা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে তেমনি অ্যাপের চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে রাইডাররা।
তারা আরও জানান, অ্যাপে কল দিলে রাইডাররা তা রিসিভ করে ঠিকই কিন্তু তারা বলে কল কেটে দিয়ে চুক্তিভিত্তিক যাবে। তারা অ্যাপের কলে যাবে না। যাত্রী রাজি না হলে তারা যাবেন না বলে জানিয়ে দেন। আর কোনো যাত্রী অতি জরুরি প্রয়োজনে রাজি হলে তাকে অ্যাপে যা ভাড়া তার চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে হয়।
রাজধানীর গুদারাঘাটে পাঠাওয়ের অ্যাপে কল দিয়ে রাইডারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন যাত্রী মো. লিমন। তিনি বলেন, আমি মিন্টু রোড যাব। আগে একজন রাইডারকে অ্যাপের মাধ্যমে কল দিয়েছিলাম, তিনি সে কল রিসিভ করেছিলেন। তখন অ্যাপে ভাড়া ১০০ টাকা দেখিয়ে ছিল। রাইডার কল রিসিভ করে আমাকে বলেন যে তিনি অ্যাপের মাধ্যমে যেতে পারবেন না, চুক্তিভিত্তিক ভাড়ার মাধ্যমে যাবেন। এজন্য তাকে ১৩০ টাকা দিতে হবে। বেশি ভাড়া কেন চাইছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজি হলে চলেন, না হয় যাব না।
তিনি বলেন, পরে আমি গুদারাঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা চুক্তিভিত্তিক রাইডারদের কাছে গিয়ে বললাম মিন্টুরোড যাব। তারা ১৫০ টাকা ভাড়া চায়। আমি সেখান থেকেও চলে আসি। এখন আবার অ্যাপে কল দিয়েছি। অ্যাপের মাধ্যমে হলে যাব, না হলে বাসে যাব।
রাজধানীর নতুনবাজার এলাকায় চুক্তিভিত্তিক মোটরসাইকেল রাইডারদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন অফিসগামী যাত্রী মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, অফিসের একটা জরুরি কাজ ছিল তাই আজ দ্রুত যেতে চেয়েছিলাম। অ্যাপে কল দিলে রাইডার আসতে দেরি হবে বলায় চুক্তিভিত্তিক যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু এরা অ্যাপের থেকে অনেক বেশি টাকা ভাড়া চাইছে। অ্যাপে যেখানে ভাড়া আসে দেড়শ, তারা চাইছে আড়াইশ টাকা। আর অফিস টাইম হলে তো কথাই নেই।
মোটরসাইকেল রাইডাররা বলছেন, অ্যাপের মাধ্যমে গেলে তাদের লাভ হয় না। তাছাড়া অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী কল পেতেও দেরি হয়। ঘণ্টা বা ২-৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তারা যাত্রীর দেখা পান না। তাই চুক্তিভিত্তিক যাত্রী পরিবহন করছেন তারা।
রাজধানীর রামপুরা ব্রিজে যাত্রীর জন্য অপেক্ষ করছিলেন রাইডার মিল্টন দাস বলেন, অ্যাপে অনেক কম ভাড়া আসে। এ ভাড়া থেকে কোম্পানি আবার টাকা কেটে নেয়। আর বাকি যে টাকা থাকে তা অনেক কম। এভাবে মোটরসাইকেল চালালে ঢাকায় সংসার নিয়ে আমাদের থাকা সম্ভব নয়। তাই চুক্তিভিত্তিক যাত্রী পরিবহন করি। এছাড়া আমাদের পক্ষে যাত্রী নেওয়া সম্ভব নয়।
আরেক রাইডার জীবন আহমেদ বলেন, রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হওয়ার সময় রাইডার কম ছিল। অল্প ভাড়া হলেও বেশি রাইড দেওয়া যেত, দিন শেষ ভালো টাকা আয় হতো। এখন এত রাইডার ঢাকা শহরে, বলার মতো না। গ্রাম থেকে অনেকেই একটি মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছে। ফলে একটা অ্যাপের কলের জন্য ২০-২৫ জন অপেক্ষা করে থাকে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে চুক্তিতে যাই। না হলে সারাদিনে যা আয় হবে, তা দিয়ে চলতে পারব না।
অন্যদিকে যাত্রী ও সচেতন নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবার কারণে রাজধানীতে অনেক দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটছে। ছিনতাই থেকে শুরু করে নানা অপরাধের ঘটনা ঘটছে চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবার কারণে। যা অ্যাপ ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবার ক্ষেত্রে তেমন ছিল না।
এমএসি/এসএসএইচ