ঢাকার জীবন
দু’ঘণ্টা আগে বের হয়েও ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারি না
রাজধানী ঢাকার যানজট এ শহরের বাসিন্দাদের কাছে একেবারে নতুন কোনো বিষয় নয়। তীব্র যানজটকে নিয়তি মেনে নিয়েই এ শহরের মানুষ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিনের জীবন।
ঢাকায় বসবাসকারীরা জানেন, পথ ১০ মিনিটের হলে তাদের হাতে রাখতে হবে আধা ঘণ্টা, পথ আধা ঘণ্টার হলে হাতে রাখতে হবে এক ঘণ্টা। রবিউল ইসলাম নামে একজনের কথাতেও সে চিত্রেরই প্রতিফলন পাওয়া গেল। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই চাকরিজীবী বলেন, দুই ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হয়েও অধিকাংশ সময়ই যথাসময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারি না।
বিজ্ঞাপন
কোথাও পৌঁছাতে বাড়তি সময় লাগার সঙ্গে ঢাকায় চলাচলে আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো গণপরিবহন সংকট। সোমবার সকালে রাজধানীর মিরপুর রোডে দাঁড়িয়ে দেখা গেল সেখানে গণপরিবহনের চেয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস আর বিভিন্ন অফিসের কাজে নিয়োজিত গাড়ির সংখ্যাই বেশি।
গণপরিবহন সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারছেন না, উঠতে পারলেও গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে, মিলছে না আসন।
আসাদগেট, শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি ৩২, কলাবাগান এলাকা ঘুরে দেখা যায় মূল সড়ক এবং আশপাশের আবাসিক এলাকার সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ মূলত ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যাই বেশি। সেই সাথে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টাফ বাসের সংখ্যাও কম নয়।
বাসস্ট্যান্ডগুলোতে দেখা যাচ্ছে, বাসের জন্য মানুষজনকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার মানুষের তুলনায় বাসের সংখ্যাও কম। যে বাসগুলো আসছে সেগুলো যাত্রীতে পরিপূর্ণ। যার কারণে বাসে উঠতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে যাত্রীদের। আর এতে বিপাকে পড়ছেন নারী, অসুস্থ এবং বৃদ্ধরা। ঠেলাঠেলি, তাড়াহুড়া করে বাসে উঠতে না পেরে নিরুপায় হয়ে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে পরের বাসের জন্য।
মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রবিউল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, সকালে অফিস পৌঁছানো রীতিমতো এক যুদ্ধ। দুই ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হয়েও অধিকাংশ সময়ই যথাসময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারি না। বাসে হুড়োহুড়ি করে উঠতে হয়। অনেকক্ষণ ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি।
তিনি বলেন, সিট পাওয়া দূরে থাক, বাসে উঠতে পারাই বড় চ্যালেঞ্জ। দিনদিন এই সমস্যা বেড়েই চলেছে। আর জ্যামের সমস্যা তো রয়েছেই। সকালে কষ্ট করে অফিসে যেতে হয়, আবার বিকেলেও কষ্ট করে অফিস থেকে ফিরতে হয়। এটা আমাদের জন্য চরম দুর্ভোগের ব্যাপার।
নূরজাহান পারভীন নামের আরেক যাত্রী বলেন, বাস আসতেই পুরুষরা ঠেলাঠেলি করে উঠতে পারছেন। কিন্তু নারীদের জন্য হয়েছে বিপদ। হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠতে পারছি না।
হাবিবুল বশর নামে আরেক যাত্রী বলেন, ঢাকা সিটি এবং ঢাকা জেলার মধ্যকার যে সকল বাস অনুমোদিত রয়েছে তাদের কী পরিমাণ বাস সচল রয়েছে এগুলো একেবারেই তদারকি কার্যক্রমের বাইরে। এছাড়াও সকালে অনেক পরিবহনেরই পর্যাপ্ত বাস নামানো হয় না। যার কারণে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
মানুষের কষ্ট লাঘবে সিগন্যালগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দায়িত্বপালনরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট সুমন কুমার মোহন্ত। তিনি বলেন, সকালে অফিসমুখী মানুষের চাপ থাকায় সড়কে গাড়ির সংখ্যাও বেশি। সিগন্যালে গাড়ির দ্রুত পাসিং নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আরএইচটি/এনএফ