জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহার চাইল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি
চট্টগ্রামে পরীর পাহাড়ে আইনজীবীদের স্থাপনা ও আইনজীবীদের নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুল হক জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন বলে দাবি করেছে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি। সমিতির নেতারা বলেন, জেলা প্রশাসক এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছেন, ন্যাক্কারজনক কাজ করেছেন। তাকে প্রত্যাহার করতে হবে। জেলা প্রশাসক আইনজীবী সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন। এজন্য জেলা প্রশাসকের উচিত আইনজীবীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অইনজীবীর সমিতির নেতারা এসব দাবি জানান। এ সময় তারা বলেন, জেলা প্রশাসক তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে সমিতির পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করে বরিশালের মতো আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে জেলা প্রশাসক। আইনজীবী সমাজ সংঘাতে বিশ্বাস করে না বিধায় জেলা প্রশাসনের সব অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সব সময় আইনি পথে হেঁটেছে। ভবিষ্যতেও আইনি পথে হাঁটবে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের কোর্ট হিল পাহাড়ে আইনজীবী সমিতির কোনো অবৈধ স্থাপনা নেই। জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনগুলো চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( সিডিএ) অনুমোদিত। আইনজীবী সমিতির ভবনগুলো নির্মাণের সময় কোনো পাহাড়-টিলা কাটা হয়নি। পাহাড়ের ঢালু রক্ষা করে অর্থাৎ পাহাড়ের আকৃতি, প্রকৃতি বিনষ্ট না করে ধাপে ধাপে ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, আইনজীবী সমিতির নতুন দুটি ভবন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাবতীয় কাজ চলমান রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতির নেতারা দাবি করে, সমিতির জায়গা, স্থাপনা ইত্যাদি সংক্রান্ত জেলা প্রশাসন থেকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ, সচিবালয়সহ সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সত্য গোপন করে গোপন প্রতিবেদনের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। যা মোটেই কাম্য নয় এবং এ ধরনের কাজ মানহানিকর।
আইনজীবীরা বলেন, কোর্ট হিল এলাকায় অনুমোদনহীন স্থাপনাগুলো থেকে জেলা প্রশাসন ভাড়া তুলে থাকে। এসব অবৈধ ও অনুমোদনহীন স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের ব্যবস্থা না নিয়ে জেলা প্রশাসন সম্পূর্ণ উদ্দশ্যপ্রণোদিতভাবে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির স্থাপনা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে মিথ্যাচার করে আসছে। যা মানহানির পর্যায়ে পড়ে।
এ সময় বলা হয়, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ক্রমবর্ধমান সদস্যদের প্রয়োজনের বিষয় বিবেচনা করে আইনজীবী সমিতির নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ১৯৭৭ সালে রেজিস্ট্রার করা ১৪৮৮৮ নং লিজ দলির মূলে চট্টগ্রাম কোর্টহিলে সরকারি খাস জমি সরকারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি বরাবর হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হক ও সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী কথা বলেন।
চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রে অবস্থিত পরীর পাহাড়ে বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন এবং আইনজীবীদের পাঁচটি ভবনসহ বেশ কিছু সরকারি কার্যালয় রয়েছে। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি সেখানে নতুন দুটি ভবন তৈরির উদ্যোগ নিলে তা নিয়ে আপত্তি তোলে জেলা প্রশাসন। সমিতির ওই দুই নতুন স্থাপনা নির্মাণকে জেলা প্রশাসন বলছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওয়াসা ও পিডিবিকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, পরীর পাহাড়ে সরকারি ভবন ও স্থাপনা ছাড়া অন্য কোনো স্থাপনায় সংযোগ না দিতে। নতুন সংযোগে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন লাগবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আজকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি।
কেএম/জেডএস