প্রস্তাবিত ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’ নিয়ে টিআইবির শঙ্কা
প্রস্তাবিত ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’ এর খসড়ায় ব্যক্তিতথ্য সুরক্ষার নামে বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ও স্বাধীন মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানায় সংস্থাটি। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটির মাধ্যমে কোনোভাবেই যেন সরকারের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে জনমত সৃষ্টি এবং ব্যক্তির মতপ্রকাশ ও বাকধীনতা বাধাগ্রস্ত না হয়। সংশ্লিষ্ট অংশীজন নিয়ে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে সরকারকে জনবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রস্তাবিত আইনটি যাতে অধিকতর জনবান্ধব, ব্যক্তিতথ্যের সুরক্ষা এবং স্বাধীন মত ও ভাব প্রকাশের সহায়ক হয়, তা নিশ্চিতে বৃহৎ পরিসের সব পক্ষের অংশগ্রহণে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে আইনটি করায় সরকারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
এ আইনের খসড়াটি ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও কোনো ‘অনির্দিষ্ট কারণে’ তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, পদক্ষেপটিকে আইনটি নিয়ে সাধারণের মধ্যে আলোচনা ও মতামতের সুযোগকে বঞ্চিত করার প্রয়াস বলা যায়, যদিও সাধারণের বৃহত্তর কল্যাণে আইনটি প্রণয়ণের কাজে হাত দিয়েছে সরকার।
এক্ষেত্রে সব সংশয় দূর করতে শীঘ্রই খসড়া আইনটি সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন তিনি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রস্তাবিত আইনে জনসাধারণের তথ্যের দেখভাল করার জন্য ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ‘মহাপরিচালক’ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সময়ের প্রয়োজনে আইনটি যদি প্রণয়ন করা হয়, তাহলে তা দেখভাল করার দায়িত্ব মহাপরিচালকের অধীনে থাকা এজেন্সির হাতে নয়, বরং একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের মাধ্যমে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির স্বার্থ সুরক্ষাসহ ব্যক্তি গোপনীয়তা ভঙ্গকারী অভিযুক্ত যে কোনো পক্ষকে যাতে আইনের আওতায় আনা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রস্তাবিত আইনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ‘ডাটা নিয়ন্ত্রণ’ করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ নির্ধারণ ও মহাপরিচালকের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এর ফলে গবেষণা ও অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের কাজ ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।
সরকার ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে তথ্য চেয়ে মাত্র ৪০ শতাংশ পেয়েছে- এক মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রস্তাবিত আইনটির মাধ্যমে কি সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়? শত প্রতিকূলতার মাঝেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে কিছুটা হলেও জনমত তৈরি ও প্রতিবাদমুখর হতে দেখা যায়।
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে টিআইবির বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটির মধ্যে অনেক নিবর্তনমূলক ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে করে স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সরকারের সমালোচনাকারীদের নির্বিচারে একহাত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
আরএম/আরএইচ