বিল্ডট্রেড গ্রুপের সাড়ে ৮ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি
বিল্ডট্রেড গ্রুপের বসুন্ধরা স্টিল কমপ্লেক্সের আট কোটি ৪৮ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন থাকলেও ২০১৫ সালের আগস্টে বিল্ডট্রেড গ্রুপ এর মালিকানা স্বত্ব কিনে নেয়।
বিজ্ঞাপন
বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভ্যাট গোয়েন্দা পাইপ উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিল্ডট্রেড গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত বসুন্ধরা স্টিল কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে আট কোটি ৪৮ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে। প্রমাণ পাওয়ায় ভ্যাট গোয়েন্দারা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত বসুন্ধরা স্টিল কমপ্লেক্সে ভ্যাট গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক মো. মাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান পরিচালনা করে। দলটি প্রতিষ্ঠানটির ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত কার্যক্রম তদন্ত বা পর্যালোচনা করে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন, মাসিক দাখিলপত্র এবং ট্রেজারি চালানসহ বিভিন্ন দলিল পর্যালোচনা করে।
তদন্তে উঠে আসে, প্রতিষ্ঠানটি আমদানিকৃত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এসআরও সুবিধায় আমদানি করে পণ্যের আকার ও আকৃতি পরিবর্তন না করে অধিকাংশই অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বাণিজ্যিক ব্যবসায়ী হিসাবে বিক্রি করেছে। আমদানি করা পণ্য আমদানিকারী প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল নয়। এক্ষেত্রে এসআরও সুবিধার অপব্যবহারের ফলে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট বাবদ এক কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪১৫ টাকা, কাস্টম ডিউটি বাবদ ৯৫ লাখ ১৮ লাখ ৩৫৪ টাকা এবং আরডি বাবদ তিন লাখ ৬৭ হাজার ৫৬১ টাকার রাজস্ব ফাঁকি রয়েছে।
লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ায় বার্ষিক অডিট রিপোর্ট তৈরি করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর ছাড়া তদন্ত মেয়াদের পরবর্তী সময়ের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট দেখাতে পারেনি। এছাড়া, আয়কর অফিসেও বার্ষিক অডিট রিপোর্ট দাখিল করেনি।
অন্যদিকে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অডিট রিপোর্ট অনুসারেও প্রতিষ্ঠানটি উৎসে কোনো ভ্যাট কর্তন করেনি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির এ খাতে প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ টাকা। এর সঙ্গে মাসভিত্তিক দুই শতাংশ হারে ৪৬ লাখ ২২ হাজার ৮৬৭ টাকার সুদ প্রযোজ্য।
এছাড়া, ওই তদন্ত মেয়াদে প্রদেয় ও চলতি হিসাবের পার্থক্য, বিভিন্ন উপকরণে অতিরিক্ত ব্যবহারের ওপর রেয়াত কর্তন, সাড়ে সাত শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পরও মূল্য ঘোষণা না দিয়ে রেয়াত গ্রহণ, নির্ধারিত সময়ের পর অবৈধ রেয়াত গ্রহণ, মূল্যভিত্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নেই এমন পণ্যের ওপর রেয়াত গ্রহণ সংক্রান্ত অনিয়ম পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
এছাড়া, আমদানি পণ্য রেজিস্টারে এন্ট্রি না করে খোলা বাজারে বিক্রি করার প্রমাণও পাওয়া গেছে, যেখানে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ দুই কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার ৮৮৫ টাকা ভ্যাট ফাঁকি ও ৬৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯২২ টাকার সুদ প্রযোজ্য।
এভাবে তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি মোট আট কোটি ৪৮ লাখ পাঁচ হাজার ৬৮৯ টাকার ফাঁকি দিয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
তদন্তে উদঘাটিত রাজস্ব আদায়ে মামলাটি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা পশ্চিমে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠাটির ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা থাকায় এর সার্বিক কার্যক্রমের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটকে মনিটরিং করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।
আরএম/আরএইচ