দেশে বর্তমানে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় কারাগারের কর্মকর্তা ও বন্দিরা যাতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত না হয় সেজন্য প্রস্তুতি নিতে দেশের সব কারাগারে চিঠি পাঠিয়েছে কারা অধিদফতর।

সম্প্রতি অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন দেশের সব বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক, সিনিয়র জেল সুপার ও সব কারাগারের জেলারদের এ চিঠি পাঠান। চিঠিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে একটি ‘এন্টি ডেঙ্গু টিম’ করার তাগিদ দেন তিনি।

চিঠিতে তিনি বলেছেন, বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার অবাধ বিচরণের কারণে সারা দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। গত বছর কারাগারগুলো অধিদফতরের নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালন করায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব শূন্যের কাছাকাছি রাখা সম্ভব হয়েছে। এবারও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে তিনি জানান, কারাগার একটি সংবেদনশীল স্থান। এখানে এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বন্দিদের নিরাপদ রাখতে নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালন করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

চিঠিতে বলা হয়েছে, কারা অভ্যন্তরে কোনো বন্দি বা কর্মকর্তার শরীরে হঠাৎ জ্বর, মাথায়, চোখের পেছনে মাংসপেশিতে ব্যথা, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, ত্বকে র‍্যাশের মতো লালচে দাগ, নাক-দাঁতের গোড়া দিয়ে অল্প অল্প রক্তক্ষরণ, রক্তবমি ও কালো পায়খানা দেখা দিলে তার ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ রয়েছে বলে ধারণা করতে হবে।

কারো মধ্যে এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে ভেজা কাপড় দিয়ে তার শরীর বারবার মুছে দিয়ে তাপমাত্রা নামাতে হবে, প্রচুর পরিমাণ পানি-শরবত এবং অন্যান্য তরল খাবার খাওয়াতে হবে, জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে, তবে কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ওষুধ সেবন করা যাবে না। এছাড়া আক্রান্তদের সবসময় মশারির ভেতরে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে, সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে, লক্ষণ দেখা মাত্র রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।

এছাড়া কারাগারের ভেতরে যাতে এডিস মশা জন্ম নিতে না পারে সেজন্য পরিত্যক্ত ক্যান, মাটির পাত্র, প্লাস্টিকের পাত্র, খেলনা, নারিকেলের খোসা, বোতল, খালি চিপস-বিস্কুটের প্যাকেট ইত্যাদি যত্রতত্র ফেলা যাবে না। ইতোমধ্যে যেগুলো ফেলা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

কোনো সেলের বারান্দায় ফুলের টবে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না, পানি জমা থাকলে পরিষ্কার করতে হবে। কারা অভ্যন্তরে কোনো ধরনের গর্ত করা থাকলে সেগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। লাঠি দিয়ে ড্রেনে জমে থাকা পানিগুলো সরিয়ে দিতে হবে। কারা অভ্যন্তর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপকভাবে কীটনাশক ওষুধ (লার্ভিসাইড) ছিটাতে হবে। কারা অভ্যন্তরে ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করতে হবে। মশার কয়েল-স্প্রে ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।

চিঠিতে তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারিতে প্রতিটি কারাগারের অভ্যন্তরে একটি ‘এন্টি ডেঙ্গু টিম’ গঠন করা যেতে পারে। এ টিম কারাগারের আওতাধীন এবং আশপাশের এলাকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবে।

এআর/এসএম/জেএস