হাতিরঝিলের স্থাপনাগুলোর কী হবে?
হাতিরঝিল এলাকায় সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ ১০ দফা নির্দেশনা দিয়ে গত ৩০ জুন আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ২ মাসের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়নের কথা থাকলেও হতিরঝিলের বাণিজ্যিক স্থাপনা এখনো সরানো হয়নি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলছে, তারা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। প্রাথমিকভাবে তারা একটি পিটিশন দাখিল করেছে।
এ পরিস্থিতিতে হাতিরঝিলে স্থাপনা গড়ে ব্যবসা পরিচালনাকারীরা পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। তারা এখনো জানেন না, তাদের স্থাপনাগুলোর কী হবে। বরাদ্দের জন্য দেওয়া টাকা আর ব্যবসায়ে বড় অংকের বিনিয়োগ- সবই একটা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পের নকশা বহির্ভূত স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং লে-আউট প্ল্যান অনুসারে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প রক্ষায় কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ মর্মে ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
একটি জাতীয় দৈনিকে ‘নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় রাজউক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিবেদনটি যুক্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৩০ জুন আদেশ দেন আদালত।
আদেশে পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে সব ধরনের হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে হাতিরঝিল প্রকল্প থেকে উচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি প্রকল্পটিকে পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি ঘোষণাসহ মোট ১০ দফা নির্দেশনা দেন আদালত।
এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা রায়ের কপি হাতে পেলে আপিল করব। একটি নীতিগত মিটিং হবে। এখন সিএমপি (সিভিল মিসেলিনেয়াস পিটিশন) করেছি। আপিলের পর যে সিদ্ধান্ত হবে, আমরা সেটাই করব।
হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা তন্ময় আহমেদ নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘এখানে কোনো দোকান বা রেস্টুরেন্ট থাকা উচিত নয়। রেস্টুরেন্টের বাইরে পার্কিং থাকায় হাতিরঝিলের সড়কে যানজট হয়। খাবারের উচ্ছিষ্ট, আবর্জনা হাতিরঝিলে পড়ে পরিবেশ নষ্ট হয়। সব মিলিয়ে এখানকার পরিবেশ সুন্দরভাবে উপভোগ করতে হলে রেস্টুরেন্ট থাকা উচিত নয়। যাদের খাবার প্রয়োজন হবে তারা হাতিরঝিলের বাইরে গিয়ে রেস্টুরেন্টে খাবেন।’
হাতিরঝিলে ব্যবসা পরিচালনাকারী একটি রেস্টুরেন্টের যৌথ মালিকানায় থাকা আনোয়ার হোসেন নামে একজন বলেন, আমরা শুনেছি হাতিরঝিলে নকশা বহির্ভূত স্থাপনা সরিয়ে নিতে আদালত রায় দিয়েছেন। তবে রাজউক উচ্ছেদের বিষয়ে এখনো আমাদের কিছু বলেনি। শুনেছি রাজউক আপিল করবে। আমরা এখন কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ, আমরা এখনো জানি না আমাদের বিষয়ে আসলে কী সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি বলেন, উচ্ছেদ করলে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হয়ে যাবে। কারণ আমরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে পজিশন বরাদ্দ নিয়েছি। তবুও যদি চলে যেতেই হয় তাহলে রাজউক যেন আমাদের বরাদ্দের টাকাটা ফেরত দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক রেস্টুরেন্টের মালিক বলেন, রেস্টুরেন্টগুলো ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম দিয়েছে। হঠাৎ করে যদি আমাদের উচ্ছেদ করা হয় তাহলে সত্যিই, বিপদ হয়ে যাবে। অনেকে ধার-দেনা করে এখানে ব্যবসা শুরু করেছেন, তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
রাজউক সূত্র বলছে, হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। এ কারণেই বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে। সেই টাকাতেই হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তাই বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ভার নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে। তাই উচ্ছেদের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর হাতিরঝিলে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে রাজউক। ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্র যাচাই করে তখন ২৭টিকে বিভিন্ন মেয়াদে ইজারা দেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে এর সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৬টি করা হয়। ইজারা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে রাজউকের দুই বছর থেকে শুরু করে ১৫ বছরের চুক্তি রয়েছে। ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে এখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা।
এএসএস/আরএইচ/জেএস