কালভার্ট নির্মাণ না করেই বিলের টাকা লোপাট!
কালভার্টের কোনো অংশই নির্মাণ না করে সম্পূর্ণ বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে ঠিকাদারসহ একটি চক্র। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিমও এ অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে।
শুধু কালভার্ট নয় রাস্তা ও গার্ডওয়ালের কাজেও নিম্নমানের প্রমাণ পেয়েছে দুদক টিম। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলা সদর ইউনিয়নের ধর্মদা এলাকায়। ইউনিয়ন পরিষদের অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে এলজিএসপি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বলেন, এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলা সদর ইউনিয়নের ধর্মদা এলাকার সিসি ঢালাই দ্বারা রাস্তা, গার্ডওয়াল ও কালভার্ট নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে।
তিনি বলেন, অভিযান পরিচালনাকালে দুদক টিম সরজমিনে রাস্তা, গার্ডওয়াল ও কালভার্টের কাজ পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, রাস্তা ও গার্ডওয়ালের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কাজের গুণগত মান অত্যন্ত খারাপ। অপরদিকে কালভার্টের কোনো অংশই নির্মাণ না করে সম্পূর্ণ টাকা বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবে দুদক টিম।
অন্যদিকে দিনাজপুর ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রাহকের ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্স প্রদানে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে দুদকের দিনাজপুরের একটি টিম। অভিযান থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণ ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পরিচালিত অভিযানেও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে দুদক টিম।
এদিকে দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে সারা দেশে ১১টি সরকারি দফতরে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্পের নামে আদায়কৃত অর্থ আত্মসাৎ; স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মেঘনার পাড় ভরাটপূর্বক দখল; পিডিবি কর্মচারীর বিরুদ্ধে ভুয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ তৈরি করে বেতন-ভাতা উত্তোলন; উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় হাঁস-মুরগী পালনের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে দোকানঘর নির্মাণপূর্বক বিক্রয় ও ভাড়া দেওয়া।
এছাড়া অভিযোগগুলো মধ্যে রয়েছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য দানকৃত জমি অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দখলপূর্বক দোকানঘর নির্মাণ; মাঠকর্মীর বিরুদ্ধে প্রকল্প থেকে ঋণ গ্রহণকারীর অর্থ আত্মসাৎ; ব্রিক ফিল্ড শ্রমিক সমবায় সমিতির অর্থ আত্মসাৎ; স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বন বিভাগের জমি দখল; উপসহকারী সেটেলম্যান্ট অফিসারের বিরুদ্ধে ঘুষ না পেয়ে এক ব্যক্তির জমি অন্য ব্যক্তির নামে রেকর্ড করে দেওয়ার অভিযোগ। যে কারণে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোয় অভিযোগের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছে দুদক।
আরএম/এসকেডি