মদ প্রসঙ্গে ‘চুপ’ পরীমণি, সাপ্লায়ার ছিলেন রাজ
প্রায় সাড়ে ১৮ লিটার মদসহ গ্রেফতার হওয়া চিত্রনায়িকা পরীমণিকে তিন দফায় মোট ৭ দিন রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে এ পর্যন্ত তিনি মাদক রাখার কথা স্বীকার করেননি, মাঝে মধ্যে মদ খেতেন বলে দাবি করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
তদন্ত সূত্র জানায়, পরীমণির বাসায় যেদিন র্যাব অভিযানে যায় সেসময় তাদের ঢুকতে বাধা দেন তিনি, সময়ক্ষেপণ করেন। প্রায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর র্যাব তার ফ্ল্যাটে ঢুকে উপস্থিত সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে পরীমণি ও সেই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা মদের বিষয়ে র্যাবকে জানান। এরপর র্যাব মদের প্রায় শতাধিক খালি বোতল ও ১৮ লিটার মদ উদ্ধার করে। এবিষয়ে পরীমণিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার বাসায় মদ ছিল না বলে দাবি করে। বোতলগুলো খালি ছিল বলেও জানায়।
তবে তদন্তে সিআইডি জানতে পারে, মদগুলো পরীমণির হেফাজতেই ছিল। ২/৩ দিন আগে এগুলো মজুত রাখা হয়েছিল। মদগুলো রাখার উদ্দেশ্য খুঁজতে গিয়ে তারা জানতে পারে, পরীমণি নিয়মিত মদ পান করতেন। তার চাহিদা মেটাতে মদ আনা হতো। পাশাপাশি তার বাসায় একটি মিনিবারের মতো ছিল। বিভিন্ন সিনেমার পরিচালক-প্রযোজকসহ মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের মধ্যে মদ্যপায়ী কেউ এলে তাদের আপ্যায়ন করতেন পরীমণি।
র্যাবের হাতে আটকের পর পরীমণিকে বনানী থানা পুলিশ, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ এবং সর্বশেষ জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। জিজ্ঞাসাবাদ করা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে প্রথম থেকেই স্বাভাবিক ছিলেন পরীমণি। তাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হলেও তিনি দায়িত্বহীনভাবে এগুলোর জবাব দিয়েছেন। পুলিশকে জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যে মদ পান করেন তিনি। এলএসডি বা আইসের মতো মাদক গ্রহণ করেননি। এগুলো তার বাসায় কীভাবে এলো সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন পরীমণি।
পরীমণির বাসায় অভিযান চালানো র্যাব-১ এর অফিসার মজিবর রহমান বলেন, পরীমণি র্যাবকে জানিয়েছে, রাজের কাছ থেকে তিনি মদ সংগ্রহ করতেন। এই সংবাদ শুনেই বনানীর ৭ নম্বর রোডে প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাসা ঘিরে ফেলে র্যাব। এরপর গ্রেফতার করা হয় তাকে। রাজের বাসা থেকেও উদ্ধার করা হয় মদ। পরীমণিকে মদ সরবরাহ করতেন রাজ।
তদন্তে অগ্রগতি কতটুকু?
পরীমণির বিরুদ্ধে দায়ের করা মাদক মামলা নিয়ে সিআইডি কর্মকর্তারা ‘নো কমেন্টস’ বললেও ঢাকা পোস্টের কথা হয় তদন্ত সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, এই মামলায় প্রায় ৮-১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরীমণি বাসার মদ থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবিষয়ে শিগগিরই চার্জশিট দেওয়া হতে পারে।
এ মামলার তদারকি কর্মকর্তা সিআইডি বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) খালিদুল হক হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি, দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তবে এ মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি মন্তব্য করা যাচ্ছে না বলে দুঃখিত।’
সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। খুব দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হবে। তার কাছে কোথায় কীভাবে মাদক এসেছে আমরা তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এর আগে গত ৪ আগস্ট পরীমণির বনানীর বাসায় কয়েক ঘণ্টার অভিযানের পর গ্রেফতার হন তিনি। সাড়ে ১৮ লিটার মদ ছাড়াও তার কাছ থেকে ৪ গ্রাম নতুন মাদক আইস, ১ ব্লট এলএসডি উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর পরীমণিকে ৩ দফায় রিমান্ডে নেয় সিআইডি। প্রথম দফায় চারদিন, এরপর দুইদিন ও একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তবে দফায় দফায় রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিচারকদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রিমান্ড চাওয়ার কারণ ও নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নথিসহ (সিডি) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এআর/এসএম