দেশ উন্নত হলে হবে না, শিশুশ্রমও বন্ধ হওয়া দরকার
শুধু দেশ উন্নত হলে হবে না, পাশাপাশি শিশুশ্রমও বন্ধ হওয়া দরকার বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মন্ত্রী বলেন, শিশু শব্দটা শুনলে আমাদের মধ্যে আবেগ আসে। যেই বয়সে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা ঠিক সেই সময় এক শ্রেণির শিশু পেটের দায়ে বা অভাবের তাড়নায় শ্রম বিক্রি করে। এটা খুবই বেদনাদায়ক।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (০৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার সার্ভে-২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নির্ধারণ করেছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধের অঙ্গীকার করেছে। এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে জরিপ শুরু করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই এক সময় শিশু ছিলাম। সে সময়ে কেউ কষ্টে আবার কেউ ভালোভাবে বড় হয়। প্রত্যেক শিশুই তার ছেলেবেলার অধিকারগুলো প্রাপ্য। এজন্য আমাদের দায়িত্ব শিশুশ্রম কমিয়ে আনা। আমরা বিবিএস এর এই জরিপ থেকে শিশুশ্রমের সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। যেটা দিয়ে শিশুশ্রমিক কমিয়ে আনতে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে এখন ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার শিশু রয়েছে, যাদের কাজ শিশুশ্রমের আওতায় পড়েছে। বাকি শিশুদের কাজ অনুমোদনযোগ্য।
কর্মরত শিশুদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছে ১২ লাখ ৮০ হাজার। আর ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। তাদের কাজের বৈশিষ্ট্য জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ। শিশুশ্রমের এ চিত্র উঠে এসেছে বিবিএস এর এক সমীক্ষায়। জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০১৩-তে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সমীক্ষাটি চূড়ান্ত করেছে বিবিএস। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম কমিয়ে আনার জন্য নতুন জরিপ শুরু করেছে বিবিএস।
বিবিএস জানায়, জরিপে মোট ব্যয় হবে ২৫ কোটি ৯১ হাজার টাকা। জরিপের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের জুন মাসে। জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০০২-০৩ মেয়াদে প্রথম শুরু হয়। এর পরে ২০১৩ সালের দ্বিতীয় সমীক্ষা শুরু হয়। এখন তৃতীয়বারের মতো দেশে শুরু হলো জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা। বিবিএস ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে।
দেশের মধ্যে সব থেকে ঢাকা বিভাগে শিশুশ্রম বেশি সাড়ে ৮ শতাংশ, এর পরেই চট্টগ্রামে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশের মধ্যে শিশুশ্রম সব থেকে কম বরিশালে ১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সিলেটে ২ শতাংশ। খুলনায় ৩ দশমিক ২, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৯, রংপুরে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ শিশুশ্রম রয়েছে।
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং ২০১৩-এর সংশোধন অনুসারে কর্মরত শিশু বলতে বোঝায়, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে। এ শ্রম অনুমোদনযোগ্য। তবে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী কোনো শিশু যদি ঝুঁকিহীন কাজও করে, তবে সেটা শিশুশ্রম হবে। তারাও কর্মরত শিশুদের মধ্যে পড়ে যায়। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হিসেবে স্বীকৃত।
প্রায় এক দশকের ব্যবধানে কর্মরত শিশুর সংখ্যার পাশাপাশি শিশুশ্রম অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিবিএসের ২০০৩ সালের জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষায় দেখা গেছে, তখন প্রায় ৭৪ লাখ কর্মরত শিশু ছিল। তাদের মধ্যে ৩১ লাখ ৭৯ হাজার শিশুর কাজ শিশুশ্রমের আওতায় ছিল। তবে এক দশকের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের সংখ্যা তেমন কমেনি, কমেছে মাত্র ১১ হাজার। ২০০৩ সালে দেশে ১২ লাখ ৯১ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ছিল। ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিশুশ্রম নির্মূল নীতিমালায় ২০১৬ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূল করার কথা বলা হয়েছে। তবুও নির্মূল হচ্ছে না। এখন ২০২৫ সালে শিশুশ্রম নিরসনের নতুন টার্গেট দেওয়া হলো।
এসআর/এসএম