সোহেল রানাকে ফেরত চেয়ে দিল্লি পুলিশকে চিঠি
গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বরখাস্ত হওয়া বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে দিল্লিতে অবস্থিত ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
পুলিশের এনসিবি শাখা থেকে রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) ভারত এনসিবিকে চিঠি পাঠানো হয়। আজ মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) আবারও অতিরিক্ত তথ্য সংযুক্ত করে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদরদফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত রোববার ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত এনসিবিকে সে দেশে গ্রেফতার রাজধানীর বনানী থানার পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানাকে (সাময়িক বরখাস্ত) ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
মহিউল ইসলাম বলেন, যদিও আমরা এখন পর্যন্ত দিল্লি এনসিবির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। তবে তারা এ ব্যাপারে নিশ্চয় তথ্য সংগ্রহ করছে। আশা করছি এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া মিলবে।
এনসিবির এআইজি বলেন, গুলশান পুলিশের উপ-কমিশনারের একটি চিঠি ডিএমপি কমিশনারের মাধ্যমে ফরওয়ার্ডিং হয়ে আমাদের কাছে এসেছে। সেখানে বরখাস্ত হওয়া সোহেল রানার ব্যাপারে মামলাসহ নানা তথ্যউপাত্ত রয়েছে। সেগুলো সংযুক্ত করে আমরা আজ (মঙ্গলবার) দুপুরের মধ্যে আরেকটি চিঠি দিল্লি এনসিবিকে পাঠাচ্ছি। যেহেতু সোহেল রানা সেখানে গ্রেফতার হয়েছেন। সে দেশের আইনি বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তবে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, বাংলাদেশ পুলিশ টু ভারত পুলিশ সেটা আমরা করছি। তবে সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।
গত শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্দায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়েন সোহেল রানা। শনিবার ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের খবরে এ কথা বলা হয়।
বিএসএফের হাতে আটক সোহেল রানা গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। বনানী থানার এ পুলিশ পরিদর্শকের বোন ও ভগ্নিপতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ই-অরেঞ্জ’ পরিচালনা করতেন।
গত ১৭ আগস্ট অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। ওই সময় তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। গ্রাহকের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই মামলা হয়। আসামিরা হলেন- ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, আমানউল্ল্যাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ এবং পুলিশের বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা।
শুরু থেকেই ই-অরেঞ্জের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি। তবে অরেঞ্জ বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠান খুলতে নেওয়া টিআইএন সনদে পরিচালক হিসেবে সোহেল রানার নাম দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিভিন্ন সময়ে আড়াই কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা অপরাধমূলক একাধিক কাজে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএসএফের কর্মকর্তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলেছে, সম্ভবত গা ঢাকা দেওয়ার লক্ষ্যে ভারতে প্রবেশ করেছেন সোহেল রানা।
সর্বশেষ গত রোববার বনানী থানার পরিদর্শক শেখ সোহেল রানার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় হওয়া প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কাছে আবেদন করেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান।
জেইউ/এসএসএইচ