পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় নির্মাণাধীন অবস্থায় ভেঙে পড়া সেতুর বিষয়ে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের সরেজমিন পরিদর্শন ও নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্রিজ নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে দুদক।

দুদকের পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাজমুল হুসাইনের নেতৃত্বে গত ৫ সেপ্টেম্বরে এক অভিযানে এমন সত্যতা মিলেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ (উপপরিচালক) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্রিজ নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযানকালে দুদক টিম সরজমিনে উক্ত ব্রিজ পরিদর্শনপূর্বক সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে প্রাপ্ত অভিযোগ প্রাথমিক সত্য হওয়ার উপাদান বিদ্যমান বলে দুদক টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারকে নিজ খরচে উক্ত গার্ডার অপসারণপূর্বক সম্পূর্ণ সেতু যথাসময়ে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আরো তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও রেকর্ডপত্র বিস্তারিত পর্যালোচনা করে কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে দুদক টিম।'

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দোভাষীপাড়া খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি গত ২৭ জুন সকালে ভেঙে যায়। ২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫.৫ মিটার প্রস্থের সেতুটি দুই গার্ডারের মাঝামাঝি ভেঙে গেছে। সেতুটি ভেঙে পড়ায় দুই ইউনিয়নের সঙ্গে কুয়াকাটা পৌরসভার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। 

বিভিন্ন সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ২ কোটি ২৬ লাখ ১৫ হাজার ৮৮৩ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) অর্থায়নে কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় পৌরসভার দরপত্রের মাধ্যমে সেতুর কাজটি চলমান রয়েছে। যদিও গত ২৬ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাগজ-কলমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সৈয়দ মো. সোহেল অ্যান্ড দীপ এন্টারপ্রাইজের নাম থাকলেও মূলত মামুন নামে এক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় সেতুর কাজ। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক পটুয়াখালীর টাউন কালিকাপুরের আজাদুল ইসলাম। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটির নির্মাণকাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী, সিমেন্ট কম ব্যবহারসহ ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ না করার কারণে এমনটি হয়েছে। নির্মাণকাজ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়রা প্রকৌশলী ও পৌর মেয়রের কাছে অভিযোগ করে এলেও তারা এতে কর্ণপাত করেনি।

এদিকে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট সারাদেশে সোমবার মোট ৮টি অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 

যার মধ্যে রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের গাছ কেটে বিক্রয়পূর্বক সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা না দিয়ে আত্মসাৎ; ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে ভুয়া কাগজপত্র সৃজনপূর্বক গ্রাহকের জমি খারিজ; প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে জমি অবৈধভাবে দখল; ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে ভুয়া মৃত্যু সনদ সৃজনপূর্বক বিধবা ভাতা উত্তোলন; ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলেদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নদী খনন প্রকল্পের কাজে নদী হতে বালু উত্তোলন করে বিক্রির অভিযােগ। 

এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট।

আরএম/জেডএস