স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ ও কেনাকাটায় অনিয়মসহ বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এমন ১২ থেকে ১৫ জন কর্মকর্তার নাম বলেছেন অধিদপ্তরের গাড়িচালক আবদুল মালেক।

দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রাজধানীর কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আবদুল মালেক অঢেল সম্পদ অর্জনের কথা অস্বীকার করেছেন বলে দুদকের একটি সূত্র জানায়। প্রয়োজনে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাড়িচালক মালেক জিজ্ঞাসাবাদে অনুসন্ধান কর্মকর্তার কাছে বলেছেন যে, তিনি ২০০১ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাড়ি চালিয়েছেন। তিনি যা কিছু করেছেন বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই করেছেন। আবার কখনো কর্মকর্তাদের আদেশ পালন করতে গিয়ে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন। মিডিয়ায় তার নামে বেশি বেশি সম্পদের কথা বলা হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে এত সম্পদের মালিক নন বলেও দাবি করেছেন ড্রাইভার মালেক।

অনুসন্ধান কর্মকর্তার এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ জানুয়ারি আদালত থেকে গাড়িচালক আবদুল মালেককে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আবদুল মালেকের চারটি বাড়ি ও তিনটি প্লটের সন্ধান পায় দুদক। যার যাচাই-বাছাই করতেই আজকের জিজ্ঞাসাবাদ।

অবৈধ অস্ত্র, জাল নোট ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গাড়িচালক মালেককে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি টাকার জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব-১ এর পরিদর্শক (শহর ও যান) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। এরপর তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

আবদুল মালেক র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পরের দিন দুদক জানায়, আগে থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম’ সঙ্গে জড়িত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আবদুল মালেক অষ্টম শ্রেণি পাস। তিনি ১৯৮২ সালে প্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পের গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। চার বছর পর অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে যোগ দেন। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ছিলেন। ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তিনি বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে ৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক, তাদের মধ্যে গাড়িচালক আবদুল মালেকের নাম রয়েছে।

আরএম/জেডএস