করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চলতি বছরের বিভিন্ন সময় দেশে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। সরকার ঘোষিত সর্বশেষ লকডাউনের ইতি হয় গত ১১ আগস্ট। দীর্ঘদিন লকডাউনে ঘরবন্দি নগরবাসী হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। তাই লকডাউন শেষে ছুটির দিনগুলোতে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় দেখা যায় নগরবাসীর।

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দীর্ঘ দিন ঘরবন্দি থাকার ফলে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছুটির দিনে নিয়মিত আসছেন তারা। অন্যদিকে লকডাউনে ঘরবন্দি থাকা অবস্থায় হাঁপিয়ে উঠেছিল শিশু-কিশোররা। তাই ছুটির দিনে বাবা-মার সঙ্গে বিনোদন কেন্দ্রগুলো এসে খেলায় মেতে ওঠে তারা। 

অনেকে আবার পরিবার নিয়ে ছুটির দিনে বেড়াতে যাচ্ছেন রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মলে। সেখানে তারা পরিবার নিয়ে ঘুরাফেরাসহ ফুড কর্নারে খাবার খেয়ে বাসায় ফিরছেন।

শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর টিএসসি, হাতিরঝিল ও যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় ঘুরে এ চিত্র দেখে যায়।

রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই নগরবাসীর জন্য অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যেকোনো উৎসবের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় সব সময় দেখা যায় হাতিরঝিলে। করোনার লকডাউন শেষের পর থেকেই বিনোদনপ্রেমীরা নিয়মিত পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বেড়াতে আসছেন হাতিরঝিলে।

মো. কাউসার রাজধানীর পরীবাগ এলাকা থেকে তিন বছরের ছেলে সন্তান সিয়াম ও স্ত্রীকে নিয়ে ছুটির দিনে হাতিরঝিল বেড়াতে এসেছেন। হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজা সংলগ্ন ব্রিজের পাশে খোলা জায়গা পেয়ে মো. কাউসের ছেলে সিয়াম রীতিমতো ফুটবল খেলায় মেতে উঠেছে।

ছুটির দিনে ছেলেকে নিয়ে হাতিরঝিলে আসার প্রসঙ্গে মো.কাউসার বলেন, দীর্ঘ দিন লকডাউনের কারণে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে যেতে পারিনি। বিশেষে করে আমার ছেলেটা লকডাউনের সময় বাইরে খেলা করার জন্য প্রায়ই বায়না করত। এখন লকডাউন না থাকায় পরিবার নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে একটু আসা আরকি। ছেলেটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে খেলাধুলা করছে দেখে ভালো লাগছে। 

অনেকে আবার পরিবার নিয়ে বেড়াতে বেছে নিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন নামীদামী শপিংমল। রাজধানীর অন্যতম বড় শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কে ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। আগত দর্শনার্থীরা যেমন দোকানে দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করার চেষ্টা করছেন আবার অনেকেই ছুটির দিনের অবকাশ উদযাপন করছেন শপিংমল ঘুরে।

তাদের মধ্যে একজন মহিমা হোসেন। তিনি জানান, তার স্বামী ও সে গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। অক্টোবরের শেষে তারা করোনা থেকে মুক্তি লাভ করছেন।

মহিমা বলেন, করোনায় আক্রান্ত ও লকডাউন থাকায় দীর্ঘ দিন বাসা থেকে বের হতে পারিনি। তাই আজ স্বামী ও এক ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে বেড়াতে এসেছি। বিভিন্ন দোকানে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করেছি প্রথমে, পরে ফুড কর্নারে সবাই খাবার খেয়ে বাসায় যাচ্ছি। এই শহরের ব্যস্ত জীবনে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে কিছুটা স্বস্তি লাগছে। যা লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। 

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর অন্য সব বিনোদন কেন্দ্রের মধ্যে মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানাতেও লকডাউন-পরবর্তী সময়ে নগরবাসী ছুটির দিনগুলোতে ভিড় জমিয়েছিলেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা ঘুরেছেন চিড়িয়াখানায়। বিশেষ করে ছোট শিশুদের নিয়ে মা-বাবারা চিড়িয়াখানায় যাচ্ছেন বেশি। করোনার কারণে দীর্ঘ সাড়ে চার মাসের বেশি চিড়িয়াখানা বন্ধ ছিল।

অন্যদিকে, ঘুরতে আসা মানুষজনের মধ্যে অনেককেই দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে, অনেককে মানতে দেখা যায়নি। ঘুরতে আসা অনেকেই মন্তব্য করেন, করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আবারও লকডাউনের ফাঁদে পড়তে পারে দেশ।

এমএসি/এইচকে