দুপুরের পর থেকে নিউমার্কেট এলাকায় ভিড় বাড়ে ক্রেতাদের/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

লোকে লোকারণ্য রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার রাস্তাঘাট, ফুটপাত, মার্কেট, দোকান, ফুট ওভারব্রিজ। মানুষের ভিড়ের কারণে হাঁটাও দায়। বিকেল গড়াতেই মানুষের এ ঢল রাস্তাঘাট ও ফুটপাত পেরিয়ে পৌঁছে যায় মূল সড়কে। মানুষের ভিড়ের কারণে ব্যাহত হয় যান চলাচলও। দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।

ছুটির দিন শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর থেকেই মানুষের ঢল নামে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট,  নীলক্ষেত ও তার আশেপাশের এলাকায়। মানুষের ভিড়ে একেবারেই উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলেও এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। তবুও জীবনযাত্রায় যেন অনেকটাই স্বাভাবিকতার ছোঁয়া লেগেছে। অধিকাংশ দোকানি ও ক্রেতার মুখে ছিল না মাস্ক।

সরেজমিনে নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টার, এলিফ্যান্ট রোড, নীলক্ষেত ও তার আশেপাশের এলাকা ঘুরে এ চিত্রই দেখা যায়। এছাড়াও এসব মার্কেটের প্রবেশপথে পূর্বে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক থাকলেও এখন আর সে রকম ব্যবস্থা নেই। মার্কেটের ভেতরের দোকানগুলোতে অধিকাংশ বিক্রেতা ও কর্মচারীর মুখে ছিল না মাস্ক। বাইরের ফুটপাতের বিক্রেতাদেরও একই অবস্থা।

বিক্রেতারা বলছেন, সব কিছু খুলে দেওয়া হবে এ বিবেচনায় মানুষজন আবারও ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। ফলে মার্কেট এবং দোকানপাটে ভিড় বেড়েছে। বহুদিন পর প্রত্যাশিত ক্রেতাদের দেখা পেয়েছেন তারা। এত মানুষের ভিড় গতমাসের ছুটির দিনগুলোতেও হয়নি।

গাউছিয়া মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী রফিকুল আলম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে দফায় দফায় মার্কেট বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রেতার পরিমাণ কম থাকলেও এখন আবার তা বাড়তে শুরু করেছে।

স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করি সারাদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। কিন্তু সারাদিন তো আর মাস্ক পরে থাকা যায় না। দোকানের কর্মচারী যারা রয়েছে তাদের মাস্ক পরিধান করতে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে কিছু সময় পর পর হাত জীবাণুমুক্ত রাখতে আমরা বলে দিয়েছি। এছাড়াও ক্রেতা যারা আসছে তাদের হাতেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়ার চেষ্টা করছি।

অন্যদিকে ফুটপাতের দোকানের বিক্রেতাদের অধিকাংশের মুখেই ছিল না মাস্ক। গরমের কারণে মুখে মাস্ক রাখতে পারেন না বলে জানান ব্যাগ বিক্রেতা আব্দুল করিম। পাশেই আরেক কাপড় বিক্রেতা সিদ্দিকুর বলেন, গরিবের করোনা নাই। আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বাঁচার জন্য ফুটপাতের বিক্রিই ভরসা। মাস্ক মুখে দিয়ে ক্রেতাদের ডাকা যায় না। তাদের সঙ্গে কথা বললেও তা শোনে না। তাই মাস্ক খুলে রেখেছি।

রাজধানীর পরিবাগ থেকে শপিং করতে আসা আফরোজা আক্তার বললেন, এখানে স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো সুযোগ নেই। মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ে সবাইকে চলাফেরা করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের উদাসীনতার কারণে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অতীতেও আমরা দেখেছি যখন স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে উদাসীনতা বেড়ে যায় তখনই করোনার প্রকোপ ও মৃতের সংখ্যা বাড়ে।  তাই যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে করোনার গণটিকা এখনও নিশ্চিত হয়নি। টিকা গ্রহণ করলেই মৃত্যু ঝুঁকি কমে কিন্তু করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই সাধারণ মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারের নজরদারিও আরও বাড়ানো উচিত।

উল্লেখ্য, করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি ২ মাস ১২ দিন পর (৭২ দিন) করোনায় সর্বনিম্ন মৃত্যু। এর চেয়ে কম মৃত্যু হয়েছিল গত ২২ জুন। সেদিন মারা গিয়েছিলেন ৬৯ জন। এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৪৩২ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩ হাজার ১৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১০ হাজার ২৮৩ জনে।

আরএইচটি/এসকেডি