ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির নানা অনিয়ম নিয়ে অন্যান্য সংস্থার তদন্ত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।

দুদক সচিব বলেন, ইভ্যালির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে কাজ চলছে। তবে এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অগ্রগতি হয়নি। প্রাথমিক অনুসন্ধানের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে অনুসন্ধান টিম।

তিনি বলেন, ইভ্যালি নিয়ে শুধু আমরা কাজ করি না। অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য সংস্থাগুলোর তদন্তের অগ্রগতি কিংবা যে পদক্ষেপ নেবে, সেগুলোও আমরা অনুসন্ধানে স্বার্থে আমলে নেব। যতটুকু জানি সেগুলো ওই পর্যায়ে যায়নি। ফলে মানিল্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ কিংবা জনগণ বা রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি কতটুকু হয়েছে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আর আমাদের নিজস্ব অনুসন্ধান এখনো চলমান।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনে অনুসন্ধান টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

এদিকে ইভ্যালির ট্যাক্স ফাইল, ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের রেকর্ডপত্র, অডিট রিপোর্ট এবং নিবন্ধিত মার্চেন্টের তালিকাসহ তলবকৃত অনেক নথিপত্র সম্প্রতি দুদকের এসেছে।

বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফার দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের পণ্য না দেওয়া কিংবা অন্য পণ্য প্রদান করা, রিফান্ডের অর্থ পেতে দেরি হওয়া, যথাসময়ে গ্রাহকসেবা না পাওয়া ইত্যাদি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পুরাতন অভিযোগের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয় ইভ্যালির গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম হিসাবে নেওয়া প্রায় ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস না পাওয়ার বিষয়টি।

এখন পর্যন্ত দুদকের কাছে যেসব নথিপত্র পৌঁছেছে বলে জানা গেছে, তার মধ্যে রয়েছে;  কোম্পানির ট্যাক্স ফাইল, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মিসেস শামীমা নাসরীন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেলের ট্যাক্স ফাইল, সর্বশেষ দুই বছরের অডিট রিপোর্ট, ইভ্যালির নিবন্ধিত মার্চেন্টের তালিকা, পেন্ডিং অর্ডারের তালিকা, ব্যাংক হিসাব লেনদেন সংক্রান্ত বেশকিছু রেকর্ডপত্র এবং সর্বাধিক লেনদেন হয়েছে এমন দশটি মার্চেন্টের তালিকা।

দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালামের সমন্বয়ে গঠিত টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ৮ জুলাই দুদকের অনুসন্ধান টিমের সুপারিশের ভিত্তিতে ইভ্যালির চেয়ারম্যান মিসেস শামীমা নাসরীন এবং এমডি মো. রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

এর আগে ৪ জুলাই ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে; দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চ ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। ওই তারিখে গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের কাছে দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল নেওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।

আরএম/এসকেডি