প্লাস্টিক ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ
প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ বলে দাবি করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন। সংগঠনটি বলছে, প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে। প্রতি বছর পৃথিবীতে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে ১৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল দরকার পড়ে। প্রতি কেজি প্লাস্টিক উৎপাদনে ২-৩ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। ফলে জলবায়ুতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সবুজ আন্দোলন আয়োজিত ‘প্লাস্টিক দূষণে বাংলাদেশ : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ জনগণ প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করেন। আর দুই ভাগ জনগণ কাঁচ ও মাটির পণ্য ব্যবহার করেন। অধিকাংশ মানুষ প্লাস্টিক পণ্য সহজলভ্য হওয়ায় ব্যবহারে আগ্রহী। আবার প্রবীণ ও কিছু সচেতন ব্যক্তি পাটজাত পণ্য ও কাপড়ের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবহার করেন। তবে তরুণ প্রজন্মই প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বেশি করে থাকেন। গ্রামাঞ্চলে প্লাস্টিকের ব্যাগ একবার ক্রয় করলে পুনরায় পরিষ্কার করে ব্যবহার করার প্রবণতা বেশি। এ ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে একবার ব্যবহারের চিত্র বেশি। প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৭৫০ কোটি টন প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা হয়েছে। যার মধ্যে ব্যবহৃত ৮০ ভাগ পণ্যের পচন ধরেনি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ১৩শ কোটি টন প্লাস্টিক ব্যবহার করা হতে পারে।
আরেকটি সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতি মিনিটে ৩৫ হাজার প্লাস্টিক পণ্য সাগরের পানিতে পড়ে। যা বছরে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৪ মিলিয়ন। প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে কার্বন নিঃসরণ ও বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে সাগরে পতিত প্লাস্টিক পণ্যে সূর্য রশ্মির বিকিরণ ঘটে, যার ফলে মাইক্রোপ্লাস্টিক উৎপন্ন হয়ে মাছের শরীরে প্রবেশ করে। অতিরিক্ত প্লাস্টিক পণ্য সাগরে পতিত হওয়ায় প্রায় ৮৫০ প্রজাতির জলজ প্রাণী রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ পাখি প্লাস্টিক দূষণের শিকার হয়।
এ সময় পরিবেশ দূষণ থেকে উত্তরণে ৯ দফা প্রস্তাব জানিয়েছে সংগঠনটি। প্রস্তাবগুলো হলো— বিভাগীয় শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রোধে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা; রিসাইকেলিং প্রক্রিয়া জোরদার করা ও আলাদা কমিশন গঠন করা; পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি ও ক্রেতা পর্যায়ে দাম কমানো এবং কাপড়ের ব্যাগের ব্যবহার নিশ্চিত করা; সমুদ্র, নদী ও জলাশয়ে প্লাস্টিক পণ্য ফেলা বন্ধ করা ও দেশের বাজার, পাবলিক প্লেস ডাস্টবিন নির্মাণ করা; পলিথিন উৎপন্ন হয় এমন সব কারখানা বন্ধ করা; হোটেল, কাঁচাবাজারসহ সব দোকানে পাটের ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিত করা; রাষ্ট্রীয়ভাবে জৈব প্লাস্টিক উৎপাদনে গবেষণা জোরদার এবং বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা করা; বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে গিয়ে স্টেকহোল্ডার বডি তৈরি করা এবং প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য রাষ্ট্র, গণমাধ্যম ও সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসা।
আলোচনা সভা শেষে পরিবেশ বিষয়ক সংবাদ প্রকাশে অবদান রাখায় কয়েকজন সংবাদকর্মীকে গ্রিনম্যান অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
এমএইচএন/ওএফ