পাসপোর্ট অধিদফতরের আশপাশে ঘোরাফেরা করা দালালকে ‘এজেন্ট’ স্বীকৃতি দিয়ে তাদের দিয়ে পাসপোর্ট করানোর পরিকল্পনা করছে পাসপোর্ট অধিদফতর। অধিদফতর বলছে, পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত চাপ কমাতেই এ পন্থা অবলম্বনের চিন্তা করা হচ্ছে।

পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে অনুমতি চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর।

অধিদফতর জানায়, অনেকে পাসপোর্টের আবেদনের নিয়ম জানে না। ঠিকমতো নাম ঠিকানা লিখতে পারে না। ত্রুটিপূর্ণ আবেদনপত্র নিয়ে এসে হয়রানির শিকার হয়। আবার দালালরাও এ সুযোগে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। তাই এ হয়রানি থেকে মুক্তির জন্য দালালদের মধ্য থেকে যোগ্যদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করতে চায় অধিদফতর। প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে এজেন্টদের যোগ্যতা নির্ধারণসহ একটি বিধিমালা করা হবে।

স্থানীয় দালাল ছাড়া কিছু ট্রাভেল এজেন্সিকেও পাসপোর্টের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

অধিদফতর আরও জানায়, এজেন্টের মাধ্যমে পাসপোর্টের ফরম পূরণ ও আবেদন করতে সরকারি ফি’র বাইরে গ্রাহকের অতিরিক্ত টাকা খরচ হতে পারে। খরচটি চূড়ান্ত না হলেও সেটি অবশ্যই সরকারি ফি’র ১০ শতাংশের কম হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী বলেন, এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। তবে অনেক পাসপোর্ট আবেদনকারী নিজেরা ফরম পূরণ করতে পারেন না। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়েন। এ সুযোগটিই দালালচক্র নিয়ে থাকে। আর এ ভোগান্তির দায় নিতে হয় পাসপোর্ট অধিদফতরকে। এ জন্য ফরম পূরণে সহায়তাকারীর যদি বৈধতা থাকে, পরিচয় থাকে, তাহলে দালালদের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না।

ই-পাসপোর্ট ফি
৫ বছর মেয়াদের ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসে পেতে ৪০২৫ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে সাত কার্যদিবসে পেতে ৬৩২৫ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ৮৬২৫ টাকা জমা দিতে হবে। তবে আবেদনকারীকে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির আবেদন করতে হলে আবেদনের আগেই নিজ দায়িত্বে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিতে হবে।

১০ বছর মেয়াদের ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসে পেতে ৫৭৫০ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে সাত কার্যদিবসে পেতে ৮০৫০ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা জমা দিতে হবে।

৫ বছর মেয়াদের ৬৪ পাতার ই-পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসে পেতে ৬৩২৫ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে সাত কার্যদিবসে পেতে ৮৬২৫ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ১২ হাজার ৭৫ টাকা জমা দিতে হবে।

১০ বছর মেয়াদের ৬৪ পাতার ই-পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসে পেতে ৮০৫০ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে সাত কার্যদিবসে পেতে ১০৩৫০ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ১৩ হাজার ৮০০ টাকা জমা দিতে হবে। 

এছাড়া ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদের নতুন অথবা রি-ইস্যু এমআরপি ৭ দিনে পেতে ৬৯০০ টাকা ও ২১ দিনে পেতে ৩৪৫০ টাকা দিতে হবে। এমআরপি ও ই-পাসপোর্ট উভয় ফি'র সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরা রেগুলার ডেলিভারির জন্য আবেদন করলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারা এক্সপ্রেস ডেলিভারির সুবিধা পাবেন।

ই-পাসপোর্ট করতে যা যা জমা দিতে হবে
একজন প্রাপ্ত বয়স্কের ই-পাসপোর্ট করতে ফরম পূরণ করে সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি জমা দিতে হবে। পাশাপাশি পরিচয়পত্রের মুল কপিও অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেখাতে হবে।

১৮-এর কমবয়সীদের জন্য জন্ম-নিবন্ধন সার্টিফিকেট, বাবা-মায়ের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অনাপত্তিপত্র-এনওসি এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য অবসরের প্রমাণপত্র হিসেবে পেনশনের দলিল দেখাতে হবে।

এআর/এসএম/জেএস