হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকায় সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা ৬০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদসহ ১০ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। গত ৩০ জুন এ রায় ঘোষণা করেন আদালত। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

রাজউক বলছে, হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, এ জন্য বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে। সেই টাকাতেই হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তাই বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ভার নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে। এ জন্যই হাতিরঝিলে বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। সংস্থাটির মতে, এই স্থাপনাগুলো অবৈধ নয়। যারা লিজ নিয়েছে তারা লিজ মানি দেন, অগ্রিম অর্থও প্রদান করেছেন।

এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা রায়ের কপি হাতে পেলে আপিল করব। একটা নীতিগত মিটিং হবে। এখন সিএমপি (সিভিল মিসিলিনেয়াস পিটিশন) করেছি। আপিলের পরে যে সিদ্ধান্ত হবে আমরা সেটা করব।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রকল্প এলাকার ব্যয় মেটাতে ২০১৫ সালে ১৭ অক্টোবর দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়ার জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে রাজউক। তাতে আবেদন করা ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্র যাচাই করে তখন ২৭টি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে বিভিন্ন মেয়াদে ইজারা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে এর সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৬টি করা হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পের নকশা বহির্ভূত স্থাপনার নির্মাণ বন্ধে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং লে-আউট প্ল্যান অনুসারে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প রক্ষায় কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এই মর্মে রুল জারি করা হয়। একটি জাতীয় দৈনিকে ‘নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় রাউজক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিবেদনটি যুক্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিটটি করা হয়। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৩০ জুন রায় দেন আদালত। রায়ে পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে সব ধরনের হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প থেকে উচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি প্রকল্পটিকে পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি ঘোষণা করেন। আদালত হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা ৬০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদসহ ১০ দফা নির্দেশনা দেন।

এদিকে বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে লিজ প্রদানকৃত প্রতিষ্ঠান ও অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কিত প্রতিবেদন দাখিল প্রসঙ্গে একটি অফিস আদেশ দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

গত ১৭ আগস্ট রাজউকের পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-১) মোহম্মদ নূরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প এলাকায় লিজ প্রদানকৃত প্রতিষ্ঠানের গ্যাস,পানি, বিদ্যুৎ ও সর্বশেষ ভাড়া আদায় সংক্রান্ত তথ্য পরীক্ষা করতে হবে। সেই সঙ্গে অবৈধ স্থাপনা সরেজমিন পরিদর্শন পূর্বক  উচ্ছেদের জন্য বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তারকে নিয়োগ করা হলো। পাশাপাশি উক্ত প্রকল্প এলাকায় বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সহায়তা করার জন্য ৭ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

এএসএস/এসকেডি