কিংসওয়ের মর্চুয়ারিতে ক্যাপ্টেনের মরদেহ, আনতে যাবে বিমান
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউমের মরদেহ ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের মর্চুয়ারিতে রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের ছাড়পত্র ও বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতির আনুষ্ঠানিকতা শেষে ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ আনতে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট যাবে নাগপুরে। তবে কবে কখন ফ্লাইটটি নাগপুর যাবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত রয়েছে (৩ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হবে)। এ কারণে ক্যাপ্টেনের মরদেহ আনতে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। ক্যাপ্টেন নওশাদের মৃত্যুর পর হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটের অপেক্ষায় ছিল বিমান। সেই সার্টিফিকেটের কপি ঢাকায় আসার পরপরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে বিমান।
তিনি আরও বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। সোমবার মধ্যরাত অথবা মঙ্গলবার সকালে আনা হতে পারে মরদেহ। বিমানবন্দরে তাকে সম্মাননা জানাবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ও সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম- জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার ঢাকা পোস্টকে জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার বাদ জোহর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সব মসজিদে ক্যাপ্টেন নওশাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও বিমানের পক্ষ থেকে তার মরদেহ দেশে আনতে প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, ক্যাপ্টেন নওশাদের অকাল মৃত্যুতে বিমানের এমডি ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালসহ বিমানের সকল স্তরের কর্মীরা গভীরভাবে শোকাহত। বিমান ক্যাপ্টেন নওশাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাচ্ছে।
এর আগে সোমবার হাসপাতালে ক্যাপ্টেনের পরিবারের সামনে তার ভ্যান্টিলেশন খুলে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম মারা গেছেন।
তখন তিনি বলেন, ‘দুপুরে কিংসওয়ে হাসপাতালের একটি সূত্র আমাকে ফোনে ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইউমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বেলা ১১টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।’
গত শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে ওমানের মাস্কাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে বিজি-০২২ ফ্লাইটটি নিয়ে ঢাকা আসার পথে ভারতের আকাশে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ বোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) কাছে ফ্লাইটটিকে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানান। একই সময় তিনি কো-পাইলটের কাছে ফ্লাইটের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন। কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ফ্লাইটটিকে নিকটস্থ নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার নির্দেশ দিলে কো-পাইলট ক্যাপ্টেন মুস্তাকিম ফ্লাইটটি অবতরণ করান।
বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজটির এই ফ্লাইটে ১২৪ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই নিরাপদে ছিলেন। শুক্রবারই আরেকটি ফ্লাইটে করে আট সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল নাগপুরে যায়। ওইদিন মধ্যরাতের পর বিমানটিকে যাত্রীসহ ঢাকার বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়।
ফ্লাইটটি অবতরণের পর ক্যাপ্টেন নওশাদকে নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ২ দিন চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে রোববার তাকে হাসপাতালের সার্জিক্যাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এসআইসিইউ) কোমায় নেওয়া হয়। সেখানে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। হার্ট অ্যাটাকের পর তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
রোববার রাতে নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে যান ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউমের দুই বোন। তারা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ক্যাপ্টেন নওশাদের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা চালু রাখার পক্ষে মত দেন।
তবে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আজ (সোমবার) বেলা ১১টার দিকে না ফেরার দেশে চলে যান ক্যাপ্টেন নওশাদ।
নওশাদ ও তার ফার্স্ট অফিসারের কারণে এবার জীবন রক্ষা পেয়েছে ওমান থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা ১২৪ যাত্রীর। তবে এটিই প্রথম নয়, পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে আরেকটি দুর্ঘটনার হাত থেকে ১৪৯ যাত্রী আর সাত ক্রু’র জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ।
২০১৭ সালে ক্যাপ্টেন নওশাদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসাপত্র পাঠায় আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ক্যাপ্টেন রন অ্যাবেল।
এআর/এইচকে