‘মেয়েগুলো ডিপ্রেশনে আছে, বাইরে বের হতে চায়’
‘তোমাদের (বাবা-মা) মধ্যে সমস্যা আমরা কী দোষ করেছি? আমাদের কেন এখানে রাখা হচ্ছে? আমাদের আর এখানে ভালো লাগছে না, আমাদের দ্রুত এখান থেকে বের করার চেষ্টা করো।’
বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে তেজগাঁওয়ের উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে দুই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তারা এসব কথা বলে বাবা ইমরান শরীফকে।
বিজ্ঞাপন
মেয়েদের সঙ্গে দেখা করে বের হয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে ইমরান শরীফ বলেন, ‘আমার মেয়েগুলো একদম চুপ হয়ে গেছে। তারা এখন অনেক কম কথা বলে। এমন পরিস্থিতি দেখে মেয়েগুলো ডিপ্রেশনে চলে গেছে। তারা বার বার আমার কাছে জানতে চাচ্ছে কখন তাদের বের করে নিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, ‘তাদের মা ও আমার মধ্যে সমস্যা আছে তা ঠিক। কিন্তু আমরা কেউ তো বাচ্চাদের কম ভালোবাসি না। আমরা দুজনই তো আমাদের বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসি, তাহলে তারা এখানে থাকবে কেন? ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের নারী পুলিশ সদস্যরা অনেক হেল্পফুল হলেও আমার মেয়েদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। তারা অনেক হাইজেনিক, এখানে যেভাবে তাদের খাবার দেওয়া হয় তারা এতে খুব ভয় পেয়ে যায়। তারা আর এখন থাকতে চাচ্ছে না। বার বার এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলছে।’
মেয়েরা কার সঙ্গে থাকতে ইচ্ছুক? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা সব থেকে ভালো বলতে পারবে আমার দুই মেয়ে। তার তো এখন কিছুটা বড় হয়েছে। তাদের কেন জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে না তারা কোথায় থাকবে?’
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) বাবা মা একমত হয়ে আদালতে আবেদন দাখিল করলে দুই জাপানি শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে উন্নত হোটেলে রাখার আদেশ দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে শিশুদের বাবার আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক আদালতে বলেন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দুই শিশুর কষ্ট হচ্ছে। শিশুদের বাবা হোটেলের সব খরচ বহন করবে।আমরা শিশুদের হোটেলে রাখার জন্য আবেদন করেছি। আমাদের আবেদনটি শুনুন।
তখন আদালত বলেন, শিশুদের মা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার নিয়ে কোনো অভিযোগ করছেন না। তারা বলছেন, শিশুরা ভালো আছে। আপনারা উভয়পক্ষ যদি শিশুদের হোটেলে বা কোনো বাসায় রাখতে একমত হন, তবেই আমরা শিশুদের হোটেলে রাখার ব্যাপারে আদেশ দিতে পারি।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট জাপানি দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এই সময়ের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাপানি মা এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশি বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন।
২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান-এরিকোর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
এমএসি/এসকেডি