ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা না গুনে ৫০ টাকার কেরোসিন কিনে নিজের বাসা-বাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনের এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (২৫ আগস্ট) সচিবালয়ে সারাদেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ, দফতর/সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার ১১তম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মেয়র এ তথ্য জানান।

আতিকুল ইসলাম বলেন, নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য কোনো কোনো নির্মাণাধীন ভবন মালিককে পাঁচ লাখ টাকাও জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু ওখানে তারা ৫০ টাকা কেরোসিন ছিটিয়ে দিলে এই জরিমানা হয় না।

ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের চিহ্নিত হটস্পটগুলো আগে-ভাগে নির্ধারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিও আহ্বান জানান আতিকুল। তিনি বলেন, এটা আগে করতে পারলে আমরা অন্যভাবে পরিকল্পনা করতে পারি।

ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান মেয়র। তিনি বলেন, সারা বছর কীভাবে ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট করতে পারি সেই পরিকল্পনা আমরা করেছি। সবাইকে বাসা-বাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে।

সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে চলছি। যদি ২০১৯ সালকে নির্ণায়ক হিসেবে ধরি, সেখানে আমাদের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে যেটা পেয়েছি, সেটা যাতে কোনোভাবেই পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেই পর্যায়ে যেন ঢাকাবাসীর ভোগান্তি না হয়, সেই লক্ষ্যেই আমরা সর্বাত্মক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।

এ সময় বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। মেয়র বলেন, ভিয়েতনামে গত জুলাই মাসে ৩৭ হাজার ৪২০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় জুলাই মাসে ১০ হাজার ৩৭১ জন। ভারত এখন পর্যন্ত পরিসংখ্যান দিচ্ছে না। তাতে বোঝা যায় কত বেশি সেখানে হতে পারে। এটা হচ্ছে এশিয়ার পারিপার্শ্বিকতা।

বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলছেন, আবহাওয়ার কারণে এই এলাকায় এডিস মশা বিস্তারের অভয়ারণ্য হয়ে থাকে। বৃষ্টির বেশি হলে এডিস মশা বেশি হবে, সেটাই আমরা লক্ষ্য করছি। এডিস মশা এবার অনুকূল আবহাওয়ায় পেয়েছে। শ্রাবণ মাসে পুরোটাই বৃষ্টি হয়েছে। ভাদ্র মাসেও বৃষ্টি চলমান রয়েছে। আবহাওয়ার যে তথ্য আমরা পেয়েছি, আগামী সাতদিনও বৃষ্টি হবে। সুতরাং এটা আমাদের জন্য একটি বড় প্রতিকূলতা।

দ্বিতীয় প্রতিকূলতা হলো- অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে আমাদের উৎসস্থল অনেক। এখন বিশেষ করে গড়ে উঠেছে ছাদ বাগান। ছোট ছোট আঁধারে যে উৎসস্থল, এগুলো ধ্বংস করা খুবই কষ্টকর। তারপরও আমাদের বিশাল কর্মযজ্ঞের কারণে ঢাকাবাসীকে এডিস মশা থেকে অনেকখানি পরিত্রাণ দিতে পারছি। এডিস মশার বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছি,- বলেন তিনি।

ফজলে নূর তাপস বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। তথাপিও বলব, আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩৫ জন মারা গেছেন। বিশেষ করে যেটা কষ্টদায়ক সেটা হলো বাচ্চারা আক্রান্ত হচ্ছে। আশা করি স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে, অভিভাবকরা আরও সচেতন হবেন।

এসএইচআর/এমএইচএস