চিত্রনায়িকা পরীমণির পক্ষে মানুষ আন্দোলন করছে জেনে নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন ভীষণ খুশি। নিজের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য প্রতিক্রিয়াটি তুলে ধরা হলো। 

তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, পরীমণির ওপর নির্যাতন নিয়ে এখন বাংলাদেশে প্রতিবাদে সোচ্চার মানুষ। দেখে প্রাণ জুড়োচ্ছে। এক সময় যখন কেউ ছিল না তার পাশে, যারা মন্দ লোক, তারা তাকে নিয়ে অকথ্য মন্দ কথা বলছিল, যারা ভালো লোক, তারা মুখ বুজে ছিল, তখন হাতে গোনা কয়েকজন শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ পরীমণির পাশে দ্বিধাহীন দাঁড়িয়েছিল। 

কত যে বিষমাখা তির তাদের বিদ্ধ করেছে তখন। তারপর ধীরে ধীরে মৃদু কণ্ঠে তার পক্ষে কথা বলতে শুরু করল কেউ কেউ, তারাও মেয়েটির সম্পর্কে তিনটে ভালো কথা বললে তিনটে মন্দ কথা বলছিল, তাতে ‘ব্যালেন্স’ হয়, অন্যায়ের প্রতিবাদও হয়। বিশিষ্টরা এলেন আরও পরে, তারও পরে এখন বিশিষ্ট-অবিশিষ্ট সকলেই চেহারা দেখাতে কার্পণ্য করছেন না। 

এভাবেই কিন্তু প্রতিবাদগুলো গড়ে ওঠে। হাতে গোনা কিছু সাহসী মানুষই সাত-পাঁচ না ভেবে স্রোতের বিপক্ষে দাঁড়ায়। স্রোত যখন খুব বেশি বিপক্ষে নয়, তখন সুশীলদের দেখা মেলে। যে মেয়েকে বেশ্যা বলা হয়, সেই মেয়ের পক্ষে সেই মেয়েরাই প্রথম দাঁড়াতে সাহস করে, যাদেরও কোনো না কোনো সময় বেশ্যা বলে সমাজের লোকেরা অপমান করেছে। 

ভদ্রমহোদয় বা ভদ্রমহিলারা অত সহজে অত্যাচারিতের পক্ষে কথা বলে না। কারো বিরুদ্ধে অন্যায় হলেও তারা আগে বুঝে নিতে চায় মুখ খুললে আবার বিপদ হবে কি না। কত তো অন্যায় হচ্ছে সমাজে, কটা অন্যায়ের প্রতিবাদ সুশীল সমাজ করে? যেটুকুই করে, গা বাঁচিয়ে করে। 

তসলিমা আরও লেখেন, আশঙ্কা হচ্ছিল যেভাবে কোনো ক্ষমতাধরের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আদালত পরীমণিকে হেনস্থা করছে, হয়তো মেয়েটির সর্বনাশ না করে ছাড়বে না। আশঙ্কা হচ্ছিল মেয়েটিকে বোধ হয় ছুড়েই ফেলে দেবে সমাজ, কিন্তু না, তার ফিরে আসার জন্য চিত্র পরিচালকরা অপেক্ষা করছেন। 

জামিনের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য তার মেরুদণ্ডহীন আইনজীবীকেও ধিক্কার দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই একটু একটু করে জনমত গড়ে উঠছে, এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস পরীমণি বিজয়ী হয়েই নিজের জীবনে ফিরে আসবে।

পরীমণিকে অন্যায়ভাবে জামিন না দিয়ে জেলে বন্দি করা হয়েছে, এ নিয়ে খবর হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারছি। কত হাজারো নির্দোষকে জামিন না দিয়ে জেলে বন্দি করা হয়েছে এবং হচ্ছে, তার খবর কে রাখে! 

কত নির্দোষকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছে, যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে, বিনা বিচারে জেলে ফেলে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর, তার তালিকা বের করা যায় না? সবার পিছে সবার নিচে পড়ে থাকা সর্বহারা ব্রাত্যদের পাশে  দাঁড়ানোর অভ্যাস করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করা শিখতে হবে। সাত-পাঁচ ভাবলে সমাজ বদলানো যায় না।

পিএসডি/আরএইচ