চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ চলমান আছে। ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৬১ শতাংশ। বাকি কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। 

চলমান প্রকল্পটির মেয়াদ প্রথমবার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হলেও রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর কথা বলা হয়নি। জানা গেছে, পাঁচটি কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ ৬১ শতাংশ শেষ হয়েছে। করোনার কারণে আমরা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছি। বিধিনিষেধের সময়ও আমরা কাজ করেছি। ওই সময় গাড়ি চলাচল সীমিত ছিল, এ কারণে কাজে কিছুটা অসুবিধা হয়েছে।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। রেলপথটি নির্মিত হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।

জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার রেলপথ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণ করা হবে রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭২৫ কিলোমিটার রেলপথ। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৩৯টি বড় সেতু, ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। হাতি চলাচলের জন্য থাকবে আন্ডারপাস। নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার।

২০১৮ সালের ১ জুলাই এ অংশের ভৌত কাজ শুরু হয়। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে ৬১ শতাংশ। বাকি কাজ শেষ করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর আবেদন করেছেন প্রকল্প পরিচালক।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সেটি অনুমোদন হবে কি না তা সিদ্ধান্ত নেবে পরিকল্পনা কমিশন।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রস্তাব অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে সময় চাওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ৪৭ লাখ টাকাই থাকছে। প্রকল্পটির অনুমোদিত বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ছিল ১ জুলাই ২০১০ সাল থেকে ৩০ জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত।

গত ১০ আগস্ট রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বরাবর ব্যয় না বাড়িয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর আবেদন করেন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান। আবেদনে প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কিছু যুক্তি তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার অংশে রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় এক হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ কাঙ্ক্ষিত সময়ে শেষ হয়নি। এতে ভৌত নির্মাণকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের চুক্তির শর্ত মোতাবেক জমি হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকল্পের ভৌত নির্মাণ কাজে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। মূলত প্রকল্পের অধিকাংশ ভূমি ২০১৮ শেষাংশ এবং কিছু ভূমি ২০১৯ সালের শেষাংশে অধিগ্রহণ করা হয়। এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, যেসব অধিকৃত জমি জেলা প্রশাসন হস্তান্তর করেছে, সেসব জমি দখলে পেতে বাধার সম্মুখীন হয়েছে রেলওয়ে। মামলা জটিলতা, লোকবলের স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে জেলা প্রশাসন সঠিক সময়ে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারেনি। ভূমির মালিকানা নিয়ে জটিলতার কারণে প্রকল্প এলাকার কিছু কিছু অংশে এখনও ক্ষতিপূরণের কাজ বাকি রয়েছে।

প্রকল্প এলাকাভুক্ত প্রায় ১৬৫ একর জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে গেজেটভুক্ত ছিল, যা ডি-রিজার্ভকরণসহ প্রকল্প কাজে ব্যবহার করার জন্য রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু এসব জমিতে থাকা গাছপালা কাটার জন্য অনুমতি পেতে দীর্ঘসময় লাগে। এতে ২০১৯ সালের শেষে সংরক্ষিত বনাঞ্চলভুক্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় গাছ কাটা ও ভৌত কাজ করার সুযোগ পায় ঠিকাদার। এ কারণে প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন।

প্রকল্প এলাকা থেকে পিজিসিবি, বিপিডিবি ও বিআরইবির পোল/টাওয়ার স্থানান্তরের জন্য অনেক আগেই টাকা পরিশোধ করা হয়। এই বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চারবার সভাও হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও সেসব পোল/টাওয়ার স্থানান্তর করতে পারেনি। ফলে প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদার নির্বিঘ্নে ভৌত কাজ বাস্তবায়ন করতে পারছে  না। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে।

প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পে পুরোদমে কাজ করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে গতবছর দেড় মাস কঠোর বিধিনিষেধের কারণে কাজ বন্ধ ছিল, চীনা নাগরিকদের অনুপস্থিতিতে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়নি। এছাড়া বিশ্বব্যাপী লকডাউনের ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহৃত আমদানি নির্ভর মালামাল সঠিক সময়ে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। এসব কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।

কেএম/এসএসএইচ