জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকোর দুই সন্তানকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রোববার বিকেলে ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিআইডির মিডিয়া কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান। 

তিনি বলেন, জাপানি নাগরিকের ওই দুই সন্তানকে হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে তাদের নিয়ে আসা হচ্ছে।

তাদের বিষয়ে সিআইডি কী পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের কার্যালয়ে নিয়ে আসার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার দুই জাপানি শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

গত বৃহস্পতিবার সকালে দুই কন্যা সন্তানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়ার্স কর্পাস আবেদন করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬)। রিটে দুই কন্যা সন্তানকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চান ওই নারী। 

২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে সেরে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর এক দিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।

গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর নিকট থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন।

আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন।  এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। 

গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। এরপর গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।

বাংলাদেশে এসে এরিকো করোনা পরীক্ষা করালে তার রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরেও ইমরান ওই রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তাকে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।

এমএসি/আরএইচ