সাইকেল লেন ব্যবহারের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করে পরিবেশবান্ধব এই বাহনের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরের রাস্তাগুলোতে আলাদা করে বাইসাইকেল লেনের দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) সমমনা ৭টি সংগঠন। একইসঙ্গে সাইক্লিস্টদের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) অনলাইনে পবা ও সমমনা ৭টি সংগঠন আয়োজিত 'পর্বতারোহী সাইক্লিস্ট রেশমা নাহার রত্না হত্যাকাণ্ডের অগ্রগতি ও করণীয় এবং সাইকেল লেনের দাবি' শীর্ষক এক আলোচনা সভা থেকে এসব সুপারিশ জানানো হয়।

তাদের সুপারিশগুলো হচ্ছে- সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত রত্না হত্যার বিচার কাজ সম্পন্ন করে অপরাধীর কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা; সম্পূর্ণ সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরি যেমন-বাসা থেকে কর্মস্থান বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত করতে হবে; সাইকেলবান্ধব অবকাঠামো তৈরি করা; সাইকেল আরোহীদের আরও সচেতনভাবে সাইকেল চালানোর জন্য সর্তক করা এবং নিয়ম মেনে সাইকেল চালাতে উৎসাহিত করা; সাইকেল লেন ব্যবহার করার প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি করা; পরিবেশবান্ধব এই বাহনটি ব্যবহারের সুবিধা নিয়ে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাইক্লিংয়ের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; দুর্ঘটনারোধ করার জন্য নিরাপদ সড়ক ও সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করা; যে স্বল্প পরিমাণ সাইকেল লেন আছে তা দখলমুক্ত করে নিরাপদ সাইক্লিং করার নিশ্চয়তা প্রদান করা এবং পারিবারিকভাবে সন্তানকে সাইকেল চালানোয় উৎসাহিত করার জন্য জনমত গড়ে তোলা।

আলোচনায় বাংলাদেশের প্রথম নারী পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার বলেন, একটি পরিবার থেকে যখন কেউ সাইকেল চালাতে বাইরে যায় তখন পরিবারের লোকজন দুশ্চিন্তা করে দুর্ঘটনা হওয়ার ভয়ে। কারণ আমাদের রাস্তাঘাট সাইকেল চালানোর জন্য উপযুক্ত নয়। সাইকেল বাহনটিকে নিম্নশ্রেণির লোকজনের বাহন হিসাবে দেখা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। ধীরগতির এই বাহনকে সম্মান জানানো এবং সাইকেল চালনাকে প্রতিষ্ঠিত করে সাইকেল লেন করা প্রয়োজন। রত্নার দুর্ঘটনার তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দ্রুত হওয়া জরুরি। তিনি তরুণ প্রজন্মের প্রতি সাইকেল চালনার আহ্বান জানান।

পবার চেয়ারমান আবু নাসের খান বলেন, যাতায়াতের অন্যতম বাহন হিসাবে সাইকেলকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা এখন সময়ের দাবি। যাতায়াত নীতিমালায় সাইক্লিং পরিপন্থি ও নিরুৎসাহিত করার মতো উপাদানগুলোকে চিহ্নিত করে সেসব দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। সাইক্লিং গ্রুপগুলোকে উৎসাহিত ও সহায়তা করতে হবে। যেসব সাইকেল লেন দখল হয়েছে সেগুলোকে দখলমুক্ত করার জন্য কাজ করতে হবে। রত্না নিহত হওয়ার ঘটনাটি একটি নিশ্চিত হত্যাকাণ্ড। ঘাতক এখানে রত্নাকে ধাক্কা দিয়েছে, দুর্ঘটনার স্থান থেকে পালিয়ে গেছে তাকে সাহায্য না করে।

নিহত রত্নার মেজো ভাই শাহ আলম বলেন, ঘাতক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। নগরের এই প্রশস্ত রাস্তায় নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করে ঘাতক সাইকেল আরোহীকে গাড়ি ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তাই এটা নিশ্চিত হত্যাকাণ্ড। আমি আমার বোনের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।

আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন ডাব্লিউ বিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারি, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, গ্রিনফোসের্র সমন্বয়ক মেসবাহ সুমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাইক্লিং ক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান, সাইক্লিস্ট ও পরিবেশকর্মী নওরিন ওশিন, আইনজীবী ও পবার সম্পাদক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব, কবি ও লেখক কামরুজ্জামান ভুঁইয়া, বাংলাদেশ সাইক্লিং ও হাঁটা জোটের ইসি সদস্য মো. শাহরিয়ার নিশু ও সাউথ ঢাকা সাইক্লিস্ট ক্লাবের প্রতিনিধি মো. জাহিদ।

এমএইচএন/জেডএস