২০২০ সালের ১৭ মার্চ মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট। প্রস্তুতি নিয়ে আগের দিনই চলে আসেন ঢাকায়। বিমানে উঠার জন্য পোশাক পরে তৈরিও হয়েছিলে। ঠিক তখনই খবর আসে ভাই গুরুতর অসুস্থ। ভাইকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে ফ্লাইট ধরতে পারেননি রাশেদুল ইসলাম। ভেবেছিলেন কয়েকদিন পর চলে যাবেন।

কিন্তু ১৮ মার্চ থেকে করোনার কারণে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ। এরপর দেড় বছর কেটে গেলেও ফ্লাইট চালু হয়নি। ফলে কাজেও যেতে যোগ দিতে পারছেন না রাশেদ।

এদিকে মানুষের দেনা আর পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়ি ছেড়েছেন তিনি। এখন ঢাকা এলিট ফোর্সের আওতায় নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করছেন রাশেদ। বেতন মাসে ৮-১০ হাজার টাকা। মালয়েশিয়ায় ৭০ হাজার টাকার বেতনের চাকরির বদলে মাসপ্রতি এই অল্প টাকা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। পরিবারের চাহিদা তো দূরের কথা, এখন নিজের চাহিদাও মেটাতে পারছেন না তিনি। তাই যেকোনো উপায়ে মালয়েশিয়া গিয়ে কাজে ফিরতে চান।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) ঢাকা পোস্টকে এভাবেই নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী রাশেদুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, ‘১৩ বছর ধরে রাজধানী কুয়ালালামপুরে কাজ করেছি। অসুস্থ ভাই ও পরিবারের লোকজনকে দেখতে ১৫ দিনের ছুটিতে গত বছরের ১ মার্চ দেশে এসেছিলাম। ১৭ মার্চ আমার ফ্লাইট ছিল। মালয়েশিয়াতে যেতে ১৬ তারিখ ঢাকায় আসি। বিমানবন্দরের পৌঁছার জন্য প্যান্ট পরছিলাম। ওই সময় ফোন আসে ভাই খুবই অসুস্থ। আমি চিন্তা করলাম ভিসার মেয়াদ এখনো ৯ মাস আছে, ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাই, পরিবারকে আরও কয়েকদিন সময় দেই।’

রাশেদ বলেন, ‘এসব চিন্তা করে থেকে গেলাম, শুরু হলো করোনা। এরপর দিন ১৮ মার্চ থেকে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভিসার মেয়াদ থাকার পরও যেতে পারছি না। এদিকে পরিবারের চাহিদা ও মানুষের ধার-দেনা দিতে পারছি না। পরিবার আর পাওনাদারের যন্ত্রণায় বাড়িতেও থাকতে পারি না। তাই ঢাকায় চলে এসেছি।’

বারিধারায় মালয়েশিয়ান দূতাবাসের সামনে প্রবাসীদের বিক্ষোভ

তিনি বলেন, ‘লজ্জার কথা কি বলব, সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করছি। আট ঘণ্টা ডিউটি করে বেতন পেতাম ৬০-৭০ হাজার টাকা। এখন পাচ্ছি ৮-১০ হাজার টাকা। এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছি। আমি রি-এন্ট্রি ভিসার মাধ্যমে যেকোনো শর্তে মালয়েশিয়া যেতে চাই। কাজ করে আমার পরিবারকে বাঁচাতে চাই।’

১৯ মাস হলো মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছেন রুমন হাওলাদার। তিনি জানান, ‘ছুটিতে আসার সময় মালয়েশিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অনেক টাকা রয়েছে। কিন্তু এখন দেশে টাকার অভাবে অনাহারে ভুগছি। যেকোনো শর্তে মালয়েশিয়া গিয়ে কাজে যোগ দিতে চাই।’

রাশেদুল ও ‍রুমনের মতই শত শত মালয়েশিয়া প্রবাসীরা যেকোনো উপায়ে কাজে যোগ দিতে চান। এই দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর বারিধারায় মালয়েশিয়ান দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এরপর দুপুর পৌনে ১টার দিকে গুলশান থানা পুলিশের সহায়তায় মালয়েশিয়ান দূতাবাসে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি পৌঁছে দেওয়া হয়।

এমআই/ওএফ