দেশে টিকার আর কোনো ঘাটতি থাকবে না
দেশেই উৎপাদন হবে চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই টিকা উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে। ফলে দেশে টিকার আর কোনো ঘাটতি থাকবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন (বিসিপিএস) অডিটোরিয়ামে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিন যৌথভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যে সিনোফার্ম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রী জানান, ‘দেশে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রায় ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন চলে এসেছে। যা থেকে ১ম ধাপে দেড় কোটি ডোজ এবং ২য় ধাপে ৫৪ লাখ ডোজ মানুষ গ্রহণ করেছে। অবশিষ্ট ১ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন এই মুহূর্তে মজুত আছে। এ মাসের ২২ তারিখের পর চীন থেকে সিনোফার্মের আরও ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে। চীনের পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকেও ভ্যাকসিন নেওয়া হবে। সুতরাং ভ্যাকসিন নিয়ে আগামীতে আর কোনো ঘাটতিতে থাকবে না বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্র। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চীন সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আজকের চীন-বাংলাদেশ ভ্যাকসিন চুক্তির মাধ্যমে দেশে ভ্যাকসিনের ঘাটতি মেটাতে চীন আরেকবার তার বন্ধুত্বের গভীরতা প্রমাণ করেছে। এই চুক্তি দেশের জন্য এক বিরাট মাইলফলক হয়ে থাকবে। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে আজকের এই চুক্তি বিরাট ভূমিকা পালন করবে এবং দেশে আর কোনো ভ্যাকসিন ঘাটতি থাকবে না। তবে ভ্যাকসিন উৎপাদন কার্যক্রম পুরোপুরি শুরুর আগ পর্যন্ত চীন, রাশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দেশের কাছ থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণ কাজ চলমান রাখবে বাংলাদেশ।’
দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার অর্থ হচ্ছে ১৩ কোটি মানুষের জন্য মোট ২৬ কোটি ভ্যাকসিন প্রস্তুত রাখতে হবে। এই বিশাল সংখ্যক ভ্যাকসিন চাহিদা পূরণ করতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আজকের এই চুক্তিটি অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চীনের সঙ্গে চুক্তিসহ কোভিড মোকাবিলায় সব কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি জানান, চীনের সঙ্গে এই ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করতে সরকার দিনরাত নিরলস কাজ করেছে। আজ সেই স্বপ্নপূরণ হলো। এই চুক্তির ফলে এখন থেকে বাংলাদেশেই কোভিড ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে এবং খুব দ্রুতই দেশে মানুষের আবারও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু হবে।
উল্লেখ্য, দেশেই চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্যে বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে বিসিপিএস মিলনায়তনে চীনের সিনোফার্ম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং দেশের অন্যতম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, ঔষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান, ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দল মুক্তাদির। স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
এছাড়াও বেইজিং থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স বিভাগের উপ-মহাপরিচালক চেন সং, সেনোফার্ম এর চেয়ারম্যান লিউ জিংযান এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সিনোফার্ম এর চিফ ইঞ্জিনিয়ার ফু কুয়াং।
টিআই/জেডএস