মোবাইলে পৌঁছে যাবে ‘ভাতা’, উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
মোবাইল ব্যাংকিং-এ সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়া উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সেবার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের দেওয়া ভাতা মোবাইলে বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলো।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ সেবার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এখন থেকে বিকাশের মাধ্যমে জিটুপি (গভর্মেন্ট টু পার্সন) পদ্ধতিতে সারাদেশের ২৪ জেলার প্রায় ২০ লাখ উপকারভোগীর কাছে এসব ভাতা সহজেই পৌঁছে যাবে। কোনো রকম বাড়তি খরচ ছাড়াই তা খুব সহজেই বিকাশের সবচেয়ে বিস্তৃত এজেন্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে ক্যাশআউট করে নিতে পারবেন উপকারভোগীরা। ক্যাশ আউট খরচের ৭ টাকা সরকার বহন করবে, বাকি টাকা বহন করবে বিকাশ নিজেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যাদের ভাতা দিচ্ছি অর্থটা যেন তাদের হাতেই পৌঁছায়, এর মধ্যে যেন অন্য কেউ না থাকে সেকারণেই সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণে এ জিটুপি পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর, চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল শেখ মনিরুল ইসলাম (অব.) এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে ভাতাপ্রাপ্ত উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। লালমনিরহাট ও পিরোজপুরের বিকাশে ভাতাপ্রাপ্তরা তাদের অভিজ্ঞতার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
লালমনিরহাটে বিধবা ভাতাপ্রাপ্ত উপকারভোগী লিলি বেগম প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, পাঁচ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে পড়ি। এ ভাতা পেয়ে সেই অবস্থা থেকে রক্ষা পেয়েছি। আগে ব্যাংকে গিয়ে দুই তিনদিন দাঁড়িয়ে থেকে ভাতা পেতাম। এখন বিকাশে ঘরে বসেই ভাতা পাব।
লিলি বেগম প্রধানমন্ত্রীকে এ উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানান। পিরোজপুরের বিধবা ভাতাপ্রাপ্ত উপকারভোগী সুফিয়া বেগমও একই কথা বলেন।
সম্প্রতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের এ সম্পর্কিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রতি ১০০ টাকা হারে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে প্রথম এই ভাতা দেওয়া শুরু করেন। বর্তমান সরকারই পর্যায়ক্রমে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জনপ্রতি ভাতা ৫০০ টাকায় উন্নীত করে। প্রতিবন্ধীরা ৭৫০ টাকা করে ভাতা পান।
ইতোপূর্বে পাইলট প্রকল্পে ভাতাভোগীদের মধ্যে জিটুপির মাধমে ভাতা বিতরণ করা হয়েছে। ভাতা বিতরণের পাইলট কার্যক্রমে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ সবচেয়ে সফলতার সঙ্গে ভাতা বিতরণ সম্পন্ন করে।
মাধ্যমিক স্তরের উপবৃত্তি বিতরণের সফলতার অভিজ্ঞতায় বিকাশ দক্ষতার সঙ্গে এ ভাতার অর্থ বিতরণ করবে। ভাতা বিতরণে প্রযুক্তির এ ব্যবহার স্বচ্ছতা, দ্রুততা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় ৭০ লাখেরও বেশি সুবিধাভোগীর কাছে সফলতার সঙ্গে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে বিকাশ। দেশজুড়ে বিস্তৃত ২ লক্ষ ৪০ হাজার এজেন্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সহায়তার অর্থ ক্যাশ আউট করার পাশাপাশি নিজের বিকাশ একাউন্ট থেকে সেন্ড মানি, মোবাইল রিচার্জ, পে বিল, কেনাকাটার পেমেন্টসহ অসংখ্য সেবা সহজেই ব্যবহার করতে পারেন উপকারভোগীরা।
এসআই/এসএম