পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা হাতে না আসায় আপাতত আর গণটিকা কার্যক্রম চলবে না। যথেষ্ট পরিমাণ টিকা হাতে এলে আবারও এ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

রোববার (১৫ আগস্ট) দুপুরে মহাখালী বিসিপিএস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, চায়নার সঙ্গে টিকা পেতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছি। যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে আগামী সপ্তাহে চুক্তি হবে। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের টিকা চুক্তি হয়েছে। এখন টিকার অপেক্ষায় আছি। ভারতের কাছে পাওনা আছে ২ কোটি ৩০ লাখ। কোনো কার্যক্রম আটকে নেই। টিকা পাওয়া সাপেক্ষে গণটিকা কার্যক্রম আবারও শুরু হবে।

মন্ত্রী বলেন, এ সপ্তাহে আমরা ৫৪ লাখ টিকা পেয়েছি। মাসের শেষের সপ্তাহের মধ্যে আরও ৫০ লাখ টিকা আসবে। এর মধ্যে আমাদের স্বাভাবিক টিকা কার্যক্রম চালু থাকবে।

জাহিদ মালেক বলেন, গ্রাম পর্যায়ে টিকা কার্যক্রম নিয়ে যাওয়াতে অনেকগুলো ভালো ফলাফল আমরা পেয়েছি। তারা টিকার ব্যাপারে সচেতন হয়েছে। তাদের আগ্রহ বেড়েছে এবং তারা এখন টিকা নিতে চায়। এটাও বুঝতে পেরেছে যে, যারা বয়স্ক তাদের আগে টিকার আওতায় আনতে হবে।

নারীদেরও টিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, পঞ্চাশোর্ধ্বদের সবার আগে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কারণ, তারাই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করছে। যত মৃত্যু ঘটছে তার নব্বই শতাংশই বয়স্ক মানুষ। নারীদেরও অনেক বেশি মৃত্যু হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই মধ্যবয়সী।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ৪০ থেকে ৬০ বছরের ভেতর নারীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। তাদের মৃত্যুহার প্রায় পুরুষের সমান হয়ে গেছে। এটা খুবই আশঙ্কাজনক, তাই আমাদের এ দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। ওষুধের পাশাপাশি নারীদেরকেও বেশি করে টিকার আওতায় আনতে হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও তাদের দিকে নজর রাখতে হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি এবং নারীদের টিকায় অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।

জীবিকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি
কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি কমিটির বিধিনিষেধ সুপারিশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরামর্শক কমিটি সব সময় ভালো পরামর্শ দেন। তারা জানিয়েছে আমাদের লকডাউনটা আরও কিছুদিন চললে ভালো হতো। কিন্তু আমাদের আবার সব দিকেই খেয়াল করতে হয়। জীবন-জীবিকার কথা ভেবেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা এর আগেও বলেছি যে, জীবিকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

তিনি বলেন, এখন যেহেতু সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। আমাদের মাস্ক পরে কাজ করতে হবে। গাড়িতে চড়ি, দোকানে যাই, রেস্টুরেন্টে যাই বা যেখানেই যাই আমাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। আর ভ্যাকসিন যেহেতু দেওয়া হচ্ছে আমরা সবাই যেন সেটা গ্রহণ করি। বিশেষ করে যারা বয়স্ক তাদের যেন আমরা অগ্রাধিকার দিই।

সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নিয়ে আসতে চাই
সংক্রমণ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি কমতে শুরু করেছে। গতমাসেও আমাদের সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেক খারাপ ছিল। এ হার ৩২ শতাংশে উঠে গিয়েছিল। এখন এটা কমে গিয়ে ২০ শতাংশের মধ্যে চলে এসেছে। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছু কমলেও আমরা সন্তুষ্ট নই, আমরা ৫ শতাংশের নিচে সংক্রমণ চাই। তাই আমরা আহবান করব সবাই মাস্ক পরবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।

সংক্রমণ কমেছে অনেকগুলো কারণে, তার অন্যতম একটি হলো লকডাউন। এছাড়া সাধারণ মানুষও কিছুটা স্বাস্থ্যবিধি মেনেছে, মাস্ক পরেছে এবং আমরা প্রায় দেড় কোটি মানুষকে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সব মানুষকেই টিকার আওতায় নিয়ে আসার।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা প্রমুখ।

টিআই/জেডএস/এসএম/জেএস