শেখ মুজিব শুধু বঙ্গের নন, ভারতেরও বন্ধু
বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অকাল মৃত্যু না হলে এই উপমহাদেশে রাজনীতির ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হতো বলে মনে করেন ভারতের যুব নেতারা। ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বঙ্গের বন্ধু নন, তিনি ভারতেরও বন্ধু ছিলেন। এই উপমহাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক নেতারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেন।’
বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কেন্দ্র (সিবিআইআর) বুধবার (১১ আগস্ট) রাতে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিবিআইআর গবেষক আশরাফুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
সিবিআইআরের পরিচালক ও সাংবাদিক শাহিদুল হাসান খোকনের সঞ্চালনায় অনলাইন আলোচনায় অংশ নেন ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বর্তমান প্রজন্মের যুব নেতারা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ভারতের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) যুব মোর্চার প্রাক্তন জাতীয় সম্পাদক ও বর্তমান মুখপাত্র সৌরভ শিকদার বলেন, ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বতঃস্ফূর্ত জননেতা হতে পেরেছিলেন এবং সর্বসাধারণ একাগ্রচিত্তে তাকে নেতা হিসাবে মেনে নিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘ইদানিং দেখছি, বাংলাদেশে একটা গোষ্ঠী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে উপেক্ষা করার প্রবণতা শুরু হয়েছে, কিন্তু জন্ম পরিচয় ছাড়া যেমন কারো পরিচয় হয় না; তেমনি বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে আলোচনার কোনো মানে হয় না। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ সমার্থক শব্দ।’
সৌরভ সিকদার আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি তিনি ১৯৬৯ সালে পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকেই মানুষ আগে থেকেই নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়াণে বাঙালি জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর উপর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি নজরুল ইসলামের একটা বিরাট প্রভাব ছিল। তাই কবিগুরুর লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে আজকের বাঙালিদের অনেক কিছু শেখার আছে।’
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ যুব কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক শ্রেয়া হালদার বলেন, বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এ কথা বলতে হয় যে, বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা ছিল, ধর্ম নিরপেক্ষতা, তার সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা, এবং তার মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ যেটাকে মুজিববাদ বলে আমরা জানি। সেই জায়গাটা বাঙালি জাতিকে উৎসাহিত করে। তার যে চিন্তা-ভাবনা ছিল সেগুলো আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে লালন ও অনুসরণ করা উচিত।
তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত পেশাজীবী যুবনেতা বিজন সরকার বলেন, একটা তর্জনী উঠিয়ে বাঙালি জাতিকে যিনি জাগ্রত করেছিলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ তার ডাকে সাড়া দিত, তিনি সবার প্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শুধু নেতৃত্ব দেননি, স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। আর এই স্বাধীনতায় বন্ধু দেশ হিসেবে পাশে ছিল ভারত ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তাই ভারত আর বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সারা জীবন অটুট থাকবে।
ভারতের তফশিল ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি মৃত্যুঞ্জয় মল্লিক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছে এটা গোটা পৃথিবীতে জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের বিষয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সাংবিধানিক কাঠামো এবং সেখানকার যে নীতিমালা, তার সঙ্গে অনেকাংশে মিল আছে। ভারতের আদলে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সাংবিধানিক নামকরণও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করেছেন। সংবিধানে সব ধর্মের, বর্ণের, লিঙ্গের মানুষের অধিকার সমানভাবে দেওয়া হয়েছে এবং ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে তিনি তুলে ধরেছিলেন।
ত্রিপুরা থেকে ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে রাজ্য বিজেপির যুবনেতা চন্দন দেবনাথ বলেন, যদিও বঙ্গবন্ধুর নামের আগে বঙ্গ কথাটি যুক্ত তবুও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নয়, ভারতেরও বন্ধু। দুই দেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও বেশি চর্চা হওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ প্রতিটা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে শিক্ষণীয়।
এসকেডি