বিধিনিষেধ শিথিলের পর সড়কে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে মোট পরিবহনের অর্ধেক চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। এমন অভিযোগের বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ ফরহাদ হোসেন বলেছেন, পরিস্থিতি বুঝে সবাই ‘বার্গেনিং’ (দর কষাকষি) করতে চায়।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আপনারা সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার আগে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। শাহজাহান খানের সঙ্গে আমরা যখন কথা বলেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা, আমি মালিক পক্ষের নেতা। মন্ত্রণালয়ের মানে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও আপনারা আলাপ করেননি। পরিবহন সেক্টরের সঙ্গেও আলাপ করেননি।’ আপনারা স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কেনো আলাপ করেন না- এমন প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক।

জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা কিন্তু তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে....যখন আমরা বিধিনিষেধগুলো দিয়েছি। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আমাদের আছে। আমরা যে নির্দেশনাগুলো দিচ্ছি, তাদের সঙ্গে বুঝেই দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আমাদের দেখতে হবে। একইসঙ্গে দেশ পরিচালনার জন্য সবার স্বার্থ আমাদের দেখতে হবে। সেগুলো নিয়েই আমরা কাজ করছি। নিশ্চয়ই আপনি জানেন, যে সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়েছে সেটা জনকল্যাণে নেওয়া হয়েছে। সরকার জনকল্যাণে সিদ্ধান্ত নেবে।’

‘কিছু-কিছু বিষয় আছে, এখানে আমরা অর্ধেক করেছি। জনগণের কল্যাণের জন্য, স্বাস্থ্যের কল্যাণের জন্য।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একটি সাধারণ বিষয়। আমরা আগেই বলেছি, ধাপে-ধাপে খুলব। এই জিনিসটা হয়তো তাদের বুঝতে ঝামেলা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, যদি বেশি গাড়ি লাগে, পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যখন আপনি খুলবেন এভাবে, সংক্রমণটা আপনার বুঝতে হবে। এখনো ২৪/২৫ ভাগ শনাক্তের হার প্রতিদিন।’

মেসেজটা এটা নয়। সব সিদ্ধান্ত আপনারা নিচ্ছেন আমলাদের পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে। যারা দেশের অন্যান্য স্টেক হোল্ডার, তাদের সঙ্গে আপনারা কথা বলছেন না। আমলাদের পরামর্শ নিয়ে কিভাবে আপনারা দেশ চালাবেন, মেসেজটা ওটা ছিল- ওই সাংবাদিক এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যোগাযোগ সবার সঙ্গে আছে। আমরা এই পরিস্থিতিগুলো বুঝি। আমাদের পরিস্থিতিগুলো কেমন আছে, এটা বুঝে সবাই বার্গেনিং (দর কষাকষি) করতে চায়, এটা হচ্ছে আসল বিষয়।’

‘কিন্তু মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রটা পরিচালনা হয়। সরকার যেটি পরিচালনা করে, কি করতে হবে, না করতে হবে... এগুলো নিয়ে সবসময় আমরা আলোচনা করি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে।’

তিনি বলেন, ‘সংক্রামক প্রতিরোধ নির্মূল আইন আমাদের আছে। সেই আইন সবাইকে স্মরণ করতে হবে। সংক্রমণ কমানোর জন্য সরকার সিদ্ধান্ত দেবে।’

‘কীভাবে কোনটা করবে, সেটার জন্য আলোচনাগুলো করতে আইনে কিছু আছে কি না...আপনি একটু খেয়াল করে দেখেন। কার সঙ্গে আলোচনা করে দিতে হবে, কি করতে হবে, সেটা সরকার সেভাবে চিন্তা করেই দেবে।’

এর আগে গত রোববার (৮ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে একটি নির্দেশনায় বলা হয়, সড়ক রেল ও নৌ-পথে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন/যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সড়কপথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে।

এই নির্দেশনার প্রতি ইঙ্গিত করে সোমবার (৯ আগস্ট) সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিষয়টি আমাদের মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে আলোচনা করে নিলে ভালো হতো। কারণ, অর্ধেক গাড়ি চলবে, অর্ধেক চলবে না, এটা নিশ্চয়তা কে দেবে? এটা ঠিকমতো হবে কি না।’

এসএইচআর/এমএইচএস