‘স্বপ্ন’ সুপার শপের ১৮ লাখ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার তৈরি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে তিন হ্যাকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। 

শনিবার (৭ আগস্ট) দিবাগত রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. নাসিমুল ইসলাম, রেহানুর হাসান রাশেদ ও রাইসুল ইসলাম। 

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে হ্যাকিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ছয়টি মোবাইল সেট, দুইটি ল্যাপটপ ও একটি সিপিইউ, ক্রিপ্টোকারেন্সি, নগদ টাকা, ইলেকট্রনিক কার্ড ও ‘স্বপ্ন’ ই-ভাউচারের মাধ্যমে ক্রয়কৃত বিপুল পরিমাণ পণ্য সামগ্রী জব্দ করা হয়।

আজ রোববার (৮ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান। 

তিনি বলেন, সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সারাদেশের ১৮৬টি আউটলেটের সেলস মনিটরিং, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, কর্মী ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেনের হিসাব, ডিজিটাল ভাউচার ম্যানেজমেন্টসহ সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ‘স্বপ্ন’র ডিজিটাল সিস্টেমটি তাই অ্যাডভান্স সাইবার সিকিউরিটি প্রটোকল অনুযায়ী অত্যন্ত সুরক্ষিত করে তৈরি করা হয়েছিল। 

তবে গত ২৬ জুন থেকে ৯ জুলাইয়ের মধ্যে সুপার শপ স্বপ্নর শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেঙে হ্যাকাররা বিপুল অংকের অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক ডিজিটাল ভাউচার জেনারেট করে বিক্রি করেন। স্বপ্ন সুপার শপের ডিজিটাল সিস্টেমের ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও রিভার্স এনালাইসিসসহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে হ্যাকার চক্রটির ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে সিটিটিসির সাইবার ইউনিট।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিটিটিসি প্রধান জানান, তারা স্বপ্নর ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে ১৮ লাখ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ ছাড়ে কয়েকটি ই-কমার্স ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে তারা জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি একাউন্টে জমা করেন। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।

এছাড়াও এই হ্যাকার গ্রুপটি প্রথমসারির বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স, দেশের প্রসিদ্ধ বাস কোম্পানি, ইলেকট্রনিক গেজেট চেইন আউটলেটসহ স্বনামধন্য অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে। 

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, সুচতুর এই হ্যাকারদের কাছে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমের একসেস রয়েছে। তারা বিভিন্ন ডার্ক ওয়েব মার্কেট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময়ে লগ ইন ক্রিডেনশিয়াল ক্রয় করেন, যা ডিজিটাল ভাউচার তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় বলেও তথ্য প্রদান করেছেন।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিআইজি আসাদুজ্জামান। 

স্বপ্ন’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, একটি অপরাধীচক্র স্বপ্ন’র সুনাম নষ্ট করার প্রচেষ্টায় এই কাজ করছে। ডিজিটাল ভাউচার জালিয়াতি করে বিক্রি করাসহ গত মাসে স্বপ্ন’র নাম করে ভুয়া অফার দিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বপ্ন এসব বিষয় নিয়ে থানায় অভিযোগ ও মামলা দায়ের করে। ‘স্বপ্ন’ কর্তৃপক্ষ সাইবার ক্রাইম টিমের সহযোগিতা চাইলে সাইবার ক্রাইম ইউনিট সেটা আমলে নিয়ে অপরাধীদের ধরেন। এজন্য ডিসি আ ফ ম আল কিবরিয়া, এডিসি নাজমুল ইসলাম ও এসিস্ট্যান্ট কমিশনার (এসি) চাতক চাকমাসহ তাদের পুরো টিমকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া ধন্যবাদ জানাচ্ছি বাংলাদেশ পুলিশ, ধন্যবাদ সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশিন, সিটিটিসি ডিএমপিকে।

এআর/এইচকে