ডেল্টাকে আরও শক্তিশালী করেছে টি-১৯আর মিউটেশন
করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ধরন হলো ভারতীয় ডেল্টা। তবে এ ধরনকে আরও শক্তিশালী করেছে টি১৯আর (T19R) মিউটেশন। এ ধরন শ্বাসতন্ত্রের ঠিক উপরিভাগে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ ঘটায়।
শনিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অণুবিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ডেল্টা ধরনের ভয়াবহতার জন্য অন্যান্য মিউটেশনের (পর্যায়ক্রমে রুপান্তর) সঙ্গে টি-১৯আর (T19R) মিউটেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিজন কুমার শীল বলেন, ডেল্টা ধরনের সঙ্গে ফ্লু ভাইরাসের যথেষ্ট মিল রয়েছে। এটি খুব দ্রুত ছড়ায়। ফলে পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে বাকি সবাই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনে কেউ আক্রান্ত হলে, তার আশপাশের সবাইকে পরীক্ষা করতে হবে। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই কাপড় বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।
নিয়মিত মাস্ক পরিধান এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আক্রান্তের পর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসা নিতে হবে। ডেল্টার চিকিৎসার মতো ওষুধ বিশ্ববাজারে আছে। এছাড়া জিংকের সমন্বয়ে তৈরি ভিটামিন সি গ্রহণের মাধ্যমে ডেল্টা ধরন প্রতিরোধ সম্ভব। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও এ ধরনের ভিটামিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে অনুমোদন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লায়লা পারভীন বানুর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. বিজন কুমার শীল। এতে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে টিকা তৈরি করার জন্য আমি আগেও প্রস্তাব করেছি, আবারও করছি। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আছেন, অধ্যাপক আজাদ আছেন, বিজন কুমার শীল আছেন। আরও দু-চার জন যারা আছেন, তাদের নিয়ে টিকা তৈরি হবে। বক্তৃতা না দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এ কাজটি করলে প্রধানমন্ত্রী স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি বলেন, আমাদের বিজ্ঞানী বিজন কুমার শীল করোনার ডেল্টা ধরন ডিকোডিং করেছেন। এর জন্য অনেক বেশি গবেষণার দরকার। আজ চীন একশ কোটি টিকা তৈরি করে বিক্রি করবে। ছয় মাসেরও আগে আমাদের এখানে চীন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে চেয়েছিল কিন্তু সেটা হয়নি। টিকা তৈরি নিউক্লিয়ার সায়েন্সের বিষয় না। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। এখানে বিনিয়োগের প্রয়োজন।
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, টিকার একটি ডোজ তৈরি করতে আধ ডলারের বেশি খরচ হয় না। এর জন্য ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। দেশে যারা ব্যবসায়ী আছেন, পরীমণির জন্য যারা বিনিয়োগ করে থাকেন, তারা ইচ্ছা করলে সাত দিনের মধ্যে ৫০ কোটি টাকা জোগার করে দিতে পারেন। এতদিন যারা দেশ শোষণ করেছেন, তারা ভালো একটা কাজ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের টার্গেট হওয়া উচিত ছয় মাসের মধ্যে নিজস্ব টিকা তৈরি করা। কিউবা যেমন টিকা তৈরি করেছে, ইরান যেমন টিকা তৈরি করেছে তেমনি, বাংলাদেশ যদি চায় তাহলে রাশিয়া সহযোগিতা করবে। আমরাও কিউবার মত টিকা তৈরি করতে পারব, তখন এর দাম পড়বে আধ ডলার।
ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভাইরোলজিস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী, পিএইচসির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন, বিএসএমএমইউর ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাক হোসেন প্রমুখ।
টিআই/আরএইচ