গত এপ্রিলে দুবাই যান চিত্রনায়িকা পরীমণি

পরীমণিকে সাভারের বোট ক্লাবে নিয়ে যাওয়া তুহিন সিদ্দিকী অমির সঙ্গে গত এপ্রিলে দুবাই যান চিত্রনায়িকা পরীমণি। সেখানে ব্লু ওয়াটার আইল্যান্ড নামে একটি কৃত্রিম দ্বীপে অমির ফ্ল্যাটে থাকেন ১৭ দিন। সেখানেই দুজনের সখ্যতা গাঢ় হয়। দেশে ফিরে অমি পরীমণিকে সাভারের বোট ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে পরীমণির শ্লীলতাহানির চেষ্টার মামলার আসামিও হন।

সাড়ে ১৮ লিটার মদ, নতুন মাদক এলএসডি ও আইস উদ্ধারের ঘটনায় রাজধানীর বনানী থেকে চিত্রনায়িকা পরীমণিকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। পুলিশে হস্তান্তরের পর তাকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মাদক ছাড়াও তাকে অন্যান্য বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। 

তুহিন সিদ্দিকী অমি

শুক্রবার (৬ আগস্ট) তদন্ত সূত্র জানায়, পরীমণিকে মাদকের অভিযোগে গ্রেফতার করা হলেও তদন্তে মিডিয়াকেন্দ্রিক নানা ‘কীর্তি’ জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসছে। 

আরও পড়ুন : পরীমণির মায়ের মৃত্যু আগুনে পুড়ে, বাবাকে করা হয় খুন

সূত্র জানায়, মডেলিং ও সিনেমায় অভিনয় করার পাশাপাশি পরীমণি বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে সেখানে ব্যবসায়ীদের দাওয়াত দিয়ে টাকা নিতেন। এছাড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেশে-বিদেশে ঘুরতেন। পরবর্তীতে টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতেন।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে পরীমণির করা মামলায় গ্রেফতার তার ‘বন্ধু’ অমির ফ্ল্যাট রয়েছে দুবাইয়ের ব্লু ওয়াটার আইল্যান্ড নামে একটি কৃত্রিম দ্বীপে। দ্বীপটি দুবাইয়ের সবচেয়ে দামি জায়গা। সাধারণত সেখানে কোনো বাংলাদেশি ফ্ল্যাট কেনেন না। সেখানে ৪৫ লাখ ইউএই দিরহাম (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ কোটি টাকা) দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন অমি। পরীমণি ২০২১ সালের এপ্রিলে দুবাই গিয়েছিলেন। তার দুবাই যাওয়ার বিমান টিকিট এবং ঘুরাফেরার সব খরচ বহন করেন অমি। সেখানে ১৭ দিন ছিলেন পরীমণি। রাতে অমির ফ্ল্যাটেই থেকেছেন।

দুবাইয়ে ১৭ দিন অমির ফ্ল্যাটে ছিলেন পরীমণি

সূত্র জানায়, অমির সঙ্গে ঘুরাঘুরি ও সময় কাটাতে দুবাই যান পরীমণি। দুবাইয়ে ১৭ দিন থাকার জন্যে পরীমণিকে অমি দিয়েছিলেন নগদ ১৫ লাখ টাকা। এছাড়াও অমি পরীমণিকে দেশে ফিরে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে দেশে ফেরার কিছুদিন পরই বোট ক্লাবের ঘটনায় অমি কারাগারে যান।

পরীমণিকে দুবাই নেওয়ার কারণ হিসেবে সূত্র জানায়, অমি মানবপাচার ব্যবসা করেন। বাংলাদেশ থেকে উঠতি বয়সী মডেলদের পাচার করে দুবাই নেন। সেখানকার বার-রেস্টুরেন্ট এবং নাইটক্লাবে নারী সরবরাহ করেন। পরীমণির দুবাই ভ্রমণ ও ছবি দেখে অনেক উঠতি মডেল এভাবে দুবাই যেতে আগ্রহ দেখাবে এবং পরীসহ অন্যান্য মেয়েদের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করিয়েও আলাদা কমিশন পাওয়ার কথা ছিল অমির। 

দুবাইয়ে ১৭ দিন থাকার জন্যে পরীমণিকে অমি দিয়েছিলেন নগদ ১৫ লাখ টাকা

নাম এসেছে আরও ৩ মডেলের

দায়িত্বশীল সূত্র আরও জানায়, দুবাইয়ে সেই ফ্ল্যাটে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন চিত্রনায়িকা ও মডেলকে নিয়েছেন অমি। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে দুবাইয়ে পাচার করা মেয়েদের ওই ফ্ল্যাটেই রাখেন তিনি। তবে সেখানে সবচেয়ে বেশি থেকেছেন এনটিভির রিয়েলিটি শো মার্কস অলরাউন্ডার চ্যাম্পিয়ন মডেল রথী। দুবাইয়ে রথী নিজেকে অমির স্ত্রী পরিচয় দেন।

এছাড়া এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত আরেক মডেল হচ্ছেন শিরিন শিলা। শিরিন শিলা ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটের সহযোগী আরমানের গার্লফ্রেন্ড ছিলেন। আরমান জেলে যাওয়ার পর দেশের একটি বৃহৎ সিটি করপোরেশনের মেয়রের বান্ধবী বলে পরিচয় দেন তিনি। পাশাপাশি শিরিন সবসময় নিজেকে বাংলাদেশ পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বান্ধবী হিসেবে পরিচয় দেন। এই দুজন মূলত মাসিক ভিত্তিতে বড় বড় ব্যবসায়ী ও স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে লিভ টুগেদার করেন। এজন্য তারা ‘মডেল’ পরিচয় ব্যবহার করেন। শিরিন শিলা নিজেকে যে মেয়রের বান্ধবী বলে পরিচয় দিতেন তার টাকায় মিরপুরে একটি ফ্ল্যাটও নিয়েছেন। 

এছাড়া এ চক্রে উঠতি অভিনেত্রী সাবার যুক্ত থাকার কথাও শোনা গেছে।

অমির সঙ্গে এসব উঠতি মডেলদের পরিচয় করিয়ে দেন মিডিয়ার একজন পরিচিত ছেলে মডেল। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন। 

১৩ জুন রাতে ফেসবুক পোস্টে পরীমণি অভিযোগ করেন, গত ৯ জুন (বুধবার) উত্তরার বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা চালান ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় তিনি সাভার থানায় ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ‘বন্ধু’ অমির নামও আসামির তালিকায় দেন পরীমণি। পরীমণিকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার সহযোগী, মাদক ও মানবপাচারের মামলায় অমি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রায় ৪ ঘণ্টার অভিযান শেষে বনানীর বাসা থেকে পরীমণি ও তার সহযোগীকে আটক করে র‍্যাব। তার বাসা থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। আটকের পর তাকে নেওয়া হয় র‍্যাবের সদর দফতরে। রাতভর সেখানেই থাকতে হয় পরীমণিকে। পরে তাকে আদালতে পাঠিয়ে ৪ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। 

এআর/এইচকে