পিয়াসা-মৌসহ ৫০ মডেলকে দিয়ে চলত অনৈতিক কার্যক্রম
রাজধানীর গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে বসানো হতো মাদকের আসর। সেখানে চলত অনৈতিক কর্মকাণ্ড। পার্টিতে অংশ নেওয়া অভিজাত শ্রেণির লোকদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও ধারণের পর ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেওয়া হতো বিপুল পরিমাণ অর্থ।
অনৈতিক কাজে কথিত মডেল পিয়াসা-মৌসহ দেশি-বিদেশি ৫০ জনকে ব্যবহার করা হতো, যাদের নাম-পরিচয় এরই মধ্যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে এসেছে। এসব কথিত মডেল ও টিভি কর্মীকে টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করতেন শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) ও তার এক সহযোগী জিসানকে আটকের পর এ তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
বুধবার (৪ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৬টায় সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানা যায়। র্যাব এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানে মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) ও সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে (৩৯) আটক করা হয়। এ সময় ১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড গোলাবারুদ, ১৩ হাজার ৩০০ পিস ইয়াবা, একটি বিলাসবহুল ফেরারি মডেলের গাড়ি, সিসার সরঞ্জামাদি, ২টি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও এটিএম কার্ড, পাসপোর্ট এবং ভারতীয় জাল মুদ্রা ৪৯ হাজার ৫০০ রুপি উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, অভিযুক্তরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এ চক্রের সদস্য প্রায় ১০-১২ জন। তারা গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করেন। এ জন্য তারা অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পান। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করত। এছাড়া বিদেশেও প্রমোদ ভ্রমণের আয়োজন করা হতো। একইভাবে উচ্চবিত্তের প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টি আয়োজন করা হতো। তারা ক্লায়েন্টদের গোপন ছবি ধারণ করে অপব্যবহার করত বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
তিনি আরও বলেন, পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের চাহিদা বা পছন্দের গুরুত্ব দেওয়া হতো। এই অবৈধ আয় থেকে উপার্জন করা অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় (গাড়ির ব্যবসা, গাড়ি আমদানি ও গরুর ফার্ম) বিনিয়োগ করেছেন মিশু হাসান ও জিসান। এই ব্যবসায় তাদের গ্রুপের সদস্যদের অবৈধ আয়েরও বিনিয়োগ রয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, আটক শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান বাংলাদেশে নামীদামি ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবসা করেন। তিনি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নিতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তার ব্যক্তিগত ২টি রেঞ্জ রোভার, অ্যাকুয়া, ভক্স ওয়াগন ও ফেরারিসহ ৫টি গাড়ি রয়েছে। তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে গাড়ির ট্যাক্স জালিয়াতি করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া আটক জিসানের একটি গরুর ফার্ম রয়েছে। যেখানে তিনি অননুমোদিত ব্রাহমা জাতের গরু লালন পালন করেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকদের টার্গেট করে আসর বসানো হতো। এই চক্রের ক্লায়েন্টের তালিকায় পিয়াসা-মৌসহ দেশি-বিদেশি ৫০ জনের নাম পাওয়া গেছে। যাদের বিদেশেও প্রমোদ ভ্রমণের আয়োজন করে পাঠানো হতো। একইভাবে উচ্চবিত্তের প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টি আয়োজন করে পিয়াসা-মৌয়ের মতো কথিত মডেলদের পাঠানো হতো। আটকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে, ভারতীয় জাল মুদ্রা রাখা ও অননুমোদিত গাড়ি আমদানি ও ব্যবহারের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
জেইউ/এসকেডি