চট্টগ্রামে মশক নিধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী

মশক নিধনে ত্রিশ দিনের বিশেষ ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করেছে  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। কর্মসূচির আওতায় প্রতিদিন চারটি ওয়ার্ডে ১৬৬ জন শ্রমিক মশার লার্ভা ধ্বংসকারী কীটনাশক ‘লার্ভিসাইড’ ও  অ্যাডাল্টিসাইড ছিটাচ্ছেন।

বুধবার ( ৪ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর বিপ্লব উদ্যান এলাকায় মিশক নিধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। 

মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার রোগী পাওয়া গেছে। সিটি করপোরেশন আগে থেকেই সতর্ক ছিল। মশক নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অভিযান চলমান ছিল। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাই আজ থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে। যাতে ওষুধ ছিটিয়ে মশক নিধন করা হবে। 

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৫৭টি স্পটে ডেঙ্গুর লার্ভা পেয়েছেন এবং ১৫টি স্থানকে ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলেছেন। এতে আমাদের একটি সুবিধা হয়েছে। যেসব স্থানে লার্ভা বেশি, সেসব স্থানগুলোতে ভালোভাবে ওষুধ ছিটিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পাব। 

মেয়র বলেন, কারও নির্মাণাধীন বিল্ডিং, ছাদে, ছাদবাগানে মশার লার্ভা পাওয়া গেলে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হবে।

তিনি বলেন, ক্রাশ প্রোগ্রামে দৈনিক ১৬৬ জন মশক নিধন কর্মী কাজ করবেন। একদিনে চারটি ওয়ার্ডে মশক নিধনের ওষুধ ছিটাবেন তারা। এভাবে চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম চলবে। 

তিনি বলেন, আমরা এক হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছি, যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করবে। কারো বিল্ডিং এ জমানো পানি থাকলে এই স্বেচ্ছাসেবকরাই পরিষ্কার করে দিবে। এছাড়া আমাদের লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং চলছে। 

মেয়র রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, মশক নিধনে কোন ওষুধ কার্যকরী, কোন ওষুধ কার্যকরী নয় তার গবেষণা করে দেখিয়েছেন। লার্বিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা বলেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন- ফগার মেশিন তেমন কার্যকর নয়, আজ কীভাবে মশক নিধনে কাজ করবেন? এই প্রশ্নের জবাবে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ফগার মেশিন কাজ করছে না বিষয়টি এমন নয়। তারা বলছেন, যে ওষুধগুলো ব্যবহার করা হতো দিয়ে মশা মরার কার্যকারিতা কম। চবির গবেষক দলকে আমরা কিছু ওষুধ দিয়েছিলাম। তার মধ্যে কিছু ওষুধ ভালো কাজ করছে। যে ওষুধ দিয়ে ৮৫ ভাগ মশা মারা যাবে। স্প্রের মাধ্যমে ভালো ফল পাওয়া যায়। দ্রুত স্প্রে করার জন্য ২০টি ‘টু স্ট্রোক ইঞ্জিন’ চালিত মশার ওষুধ ছিটানোর মেশিন সংগ্রহ করেছি। এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও সংগ্রহ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আজ ক্রাশ প্রোগ্রামে লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড ওষুধ ব্যবহার করছি। লার্ভিসাইড ওষুধটি বেশি কার্যকারী।

পরে মেয়র বিপ্লব উদ্যানে মশার ওষুধ ছিটিয়ে মশক নিধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এসময় মশক নিধন কাজে নিয়োজিত কর্মীদের স্প্রের মাধ্যমে ও ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটাতে দেখা গেছে। 

এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কয়েকজন গবেষক মশা মারার ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধনে যে ওষুধ ব্যবহার করছে, তার কার্যকারিতা মাত্র ২০ শতাংশ। তবে ফগার মেশিনের চেয়ে স্প্রে করে ওষুধ ছেটানোতে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর অনুরোধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এই গবেষণা করে। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) চবি উপাচার্য ড. শিরীন আখতারের উপস্থিতিতে মেয়রের কাছে গবেষণা কমিটির প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়েছে। 

গবেষক দলের আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মালিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রবিউল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের পাঁচটি নমুনা দেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে দুইটি তারা বর্তমানে ব্যবহার করছে। সিটি করপোরেশন বর্তমানে যে দুটি ওষুধ ব্যবহার করে, সেগুলোর কার্যকারিতা কম পাওয়া গেছে। সেগুলোর কার্যকারিতা স্প্রে মেশিনের মাধ্যমেও নেই, ফগার মেশিনের মাধ্যমেও নেই। এছাড়া তারা আরও নতুন তিনটি নমুনা আমাদের দিয়েছিল।  

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা করে দেখেছি চসিকের সরবরাহ করা হারবাল জাতীয় লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ব্যবহার করে শতভাগ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। এই ওষুধটিতে ভালো কার্যকর হয়েছে। বাকি চারটির তেমন কোনো কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয়নি। 

তিনি আরও বলেন, এই পাঁচটি ওষুধের কোনোটিই ফগার মেশিনে কার্যকর না। আমরা শুধু স্প্রের মাধ্যমেই শতভাগ কার্যকারিতা পেয়েছি। এতে লার্ভা ও মশা মরা যাচ্ছে।   

কেএম/এইচকে