জাতির পিতার এই দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের মানুষ আরও আগেই সুন্দর ও উন্নত জীবন পেত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) বস্তিবাসীর জন্য আধুনিক ফ্ল্যাট এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তৈরি অনেকগুলো বহুতল আবাসিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে বস্তিবাসীদের হাতে ভাড়াভিত্তিক ৩০০ ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়। একই অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করা হয় মাদারীপুরের সমন্বিত অফিস ভবন।
ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার এই বাংলাদেশে প্রত্যেকটা মানুষ সুন্দর ও উন্নত জীবন পাবে। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে আরও আগেই সেটা পেত।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার ফলে সেটা পেলাম না। তবে আমরা তার সেই কাজই করে যাচ্ছি। জাতির পিতার এই দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। পিছিয়ে থাকবে না।
তিনি বলেন, জাতির পিতা তার জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য। তিনি সব সময় একটি কথাই বলতেন, ”আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলাদেশের মানুষ অন্ন পাবে, বস্ত্র পাবে, তারা উন্নত জীবনের অধিকারী হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশের মানুষ রোগ-শোকে ছিল। শিক্ষার আলো পেত না। তাদের ভাগ্যন্নোয়ন করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর মূল লক্ষ্য। এজন্য ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি থেকে তিনি ধাপে ধাপে বাঙালি জাতিকে মুক্ত ও স্বাধীন করেছেন। আর এই দাবির সংগ্রামের মধ্যেই তাকে জেলে নিয়েছে, নির্যাতন করেছে, হত্যা করতে চেয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ভূমিহীনদের ঘর করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সাড়ে তিন বছর একটা রাষ্ট্রের জন্য কম সময়। তখন তো একটা প্রদেশ ছিল। সেটা দেশে উন্নীত করা ও তার গঠন করা; এটা তিনি করে গেছেন। কিছু বেঈমান মুনাফেকের জন্য তার ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হয়নি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতার হত্যাকণ্ডের সময় আমরা তখন দেশের বাইরে ছিলাম। আমার দল ও বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় ফিরে আসি। আমার আসার পথ সহজ ছিল না। তৎকালীন ক্ষমতা দখলকারীরা নানা বাধা সৃষ্টি করেছে।
সরকার প্রধান বলেন, আজকে আমরা ক্ষমতায়। সরকারে থেকে তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের জীবন মান উন্নত করা এবং সংবিধানের আলোকে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে আমরা কাজ করাব, তাদের ভালোমন্দও তো দেখতে হবে। আজিমপুর সরকারি কলোনিতে গ্যাস ছিল না, আমিই আব্বাকে বলে সে গ্যাসের লাইন করে দিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সরকার গঠন করে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সবাইকে ফ্ল্যাট করে দেবো। সুন্দর পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা করে দেবো, যাতে কর্মকর্তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা মহকুমাকে জাতির পিতা জেলায় রূপান্তর করেন। জেলা গভর্নর নিয়োগ দেন। যেন প্রত্যেকটা জায়গা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠতে পারে। পঁচাত্তরের পর এ পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ফেলা হয়। এখন আমরা সে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমপ্লেক্স করে দিয়েছি। যাতে এক যায়গা থেকে সব সেবা পাওয়া যায়। পরে উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন করে দিয়েছি। এখন মাদারীপুরে জেলা কমপ্লেক্স করে দিলাম। এক ছাদের নিচে সব সরকারি সেবা পাবে মানুষ। সব জেলা ও উপজেলায় কমপ্লেক্স করে দেবো। অফিসারদের থাকার জন্য ফ্ল্যাটও করে দেবো।
তিনি বলেন, আমি যখন সরকারে আসি তখন এই বস্তির ছোট ছোট বাচ্চারা যারা রাস্তায় ঘুরে বেড়াত, যারা রাস্তার টোকাই, আমি তাদের গণভবনে ডেকে নিয়ে এসে তাদের সঙ্গে আলোচনা করি, জিজ্ঞেস করি, কেন তারা বস্তিতে থাকে? কেন এলো নিজের বাড়ি ছেড়ে, ভিটে-মাটি ছেড়ে? অনেক ধরনের তথ্য আমি পাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কতগুলো প্রোগ্রাম নিয়েছিলাম। যে বস্তিবাসী যারা নিজের গ্রামে ফিরে যেতে চায় তাদের জন্য একটা কর্মসূচি আমি নিয়েছিলাম, ঘরে ফেরা কর্মসূচি। একজন বস্তিবাসী যদি নিজে গ্রামে ফিরে যায়, তার যদি ভিটে-মাটি থাকে সেখানে বিনা পয়সায় ঘর বাড়ি তৈরি করে দেওয়া। তাকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া, স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া। পাশাপাশি ছয় মাসের খাবার বিনাপয়সায় দেওয়া এবং সে যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেওয়া।
তিনি বলেন, প্রায় ১৮ হাজার পরিবার নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল। এভাবে আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। ঢাকায় যারা থাকে আসলে এ রকম নিম্ন আয়ের মানুষ আমাদের প্রয়োজন আছে। দৈনন্দিন কাজের জন্যও প্রয়োজন আছে। বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ কাজের জন্য প্রয়োজন আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্তিতে তারা মানবেতর জীবন যাপন করে। এটি অস্বাস্থ্যকর ও বসবাসের অনুপযোগী। তাদের জন্য সুন্দর ও আধুনিক ব্যবস্থাপনায় থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আজকে ৩০০ পরিবারকে দিচ্ছি ৩০০ ফ্ল্যাট। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ফ্ল্যাট দেবো।
তিনি বলেন, কেউ গ্রামে যেতে চাইলে সে ব্যবস্থাও করব। গ্রামে ঘরবাড়ি করে দেবো। ঢাকায় ফ্ল্যাটে থাকলে মাসে ভাড়া দিয়ে থাকতে হবে। গ্রামে গেলে সব বিনামূল্যে করে দেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, পূর্বাচলে যাদের জমির মালিকানা ছিল, তাদের একটা করে প্লট দেওয়ার কথা ছিল। সেটা কেউ করেনি। আমাদের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নামমাত্র মূল্যে তাদের প্লটগুলো দিয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এইউএ/এসএম/জেএস