রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) সহযোগী ও বান্ধবী অবন্তীকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) ধানমন্ডির ১০ নং সড়কের একটি বাসা থেকে সংস্থাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম এক অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য ঢাকাপোস্টকে বলেন, পিকে হালদারের মামলার তদন্তে অবন্তীকার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে আজ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজই তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

গত ২৮ ডিসেম্বর পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বান্ধবী অবন্তীকা বড়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছিল। তবে ওই সময় তিনি হাজির হননি।

অবন্তীকার অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, পিকে হালদার, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী এবং পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তীকা বড়াল মিলে প্রথমে ‘সুখদা’ নামে একটি কোম্পানি করেন। এরপর ‘সুখদা’র শেয়ার দিয়ে খোলেন হাল ইন্টারন্যাশনাল। এই হালের পরিচালক হন প্রীতিশ ও তার স্ত্রী সুস্মিতা। আবার এই হালের ৯০ ভাগ শেয়ারের মালিক হন সুখদার পক্ষে প্রশান্তের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তীকা। হাল ক্যাপিটালের ৯০ ভাগ শেয়ারের মালিক থাকে হাল ইন্টারন্যাশনাল। বাকি ১০ ভাগ রাখা হয় হাল ক্যাপিটালের দুই কর্মচারীর নামে। তারাই হাল ক্যাপিটালের নামে আগে থেকে বিদ্যমান মাইক্রোটেকনোলজি নামে একটি কোম্পানির শেয়ার কেনেন। যার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ রয়েছে পিকে হালদার ওই প্রতিষ্ঠানসহ পিপলস লিজিং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালন করে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে এরইমধ্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পরপরই প্রশান্ত কুমার হালদারের নাম উঠে আসে। 

পিকে হালদারের দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতায় এখন পর্যন্ত ৮৩ ব্যক্তির প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা ফ্রিজ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সহায়তায় বিভিন্ন সময়ে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের ৩৯ কোম্পানির শতাধিক ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত ওই টাকা ফ্রিজ করা হয়।

পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি

এ বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, বাংলাদেশের পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। বাংলাদেশ পু‌লিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) অর্থাৎ ইন্টারপোলের ঢাকা শাখার অনুরোধে ইন্টারপোল এ রেড নোটিশ জারি করে।

গার্লফ্রেন্ডদের কোটি কোটি টাকা পাঠিয়েছেন পি কে হালদার

গত বছরের ২০ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী পিকে হালদারকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এরইমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলে পাঠানো হয়েছে।

দুদক আইনজীবী আরও জানান, পিকে হালদারের ৭০/৮০ জন গার্লফ্রেন্ডের সন্ধান পেয়েছে দুদক। এদের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা পাঠিয়েছেন তিনি। আমরা সেসব অ্যাকাউন্ট অনুসন্ধান করছি।

 

এমআর/জেডএস