নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজি পদে নারী নিয়োগ না দেওয়ার যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছেন সেটা সংবিধান পরিপন্থী ও মানবতাবিরোধী দাবি করে তা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) রাতে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

বিবৃতি বলা হয়- ‘আমরা সংবাদ মাধ্যমে লক্ষ্য করলাম যে, নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নারীর দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় বলে আইন মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মনে করি এই বিষয়টি আমাদের সংবিধান পরিপন্থী ও মানবতাবিরোধী। তাই হাইকোর্টের এই রায়টি পুনর্বিবেচনা করা হোক। 

যখন সরকার নারীর ক্ষমতায়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশ যখন রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হচ্ছে, আমাদের দেশের নারীরা যখন ইতিবাচক, উৎপাদনমূলক, দায়িত্বশীল, দায়বদ্ধ, সাহসী ভূমিকা পালন করছে, সেই সময় নারীর প্রতি নেতিবাচক এই ধরনের একটি রায় অত্যন্ত দুঃখজনক।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই বিধি নিষেধসহ হাইকোর্টের রায় সংবিধানে প্রদত্ত নারীর অংশগ্রহণের অধিকারকে বাধাগ্রস্থ করবে বলে মনে করে এই রায় পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছে।

উল্লেখ্য, হাইকোর্ট রোববার (১০ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক রায়ে বলছে যে সামাজিক ও শারিরীক বাস্তবতার কারণে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজি হতে পারবেন না।

এর আগে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবেন না মর্মে আইন মন্ত্রণালয়ের সিন্ধান্ত বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট।

২০১৪ সালে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িয়ার পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের  নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনজন নারীর নাম প্রস্তাব করেন উপদেষ্টা কমিটি। তিন সদস্যর এই প্যানেল আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে একই বছরের ১৬ জুন আইন মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে নারীদের দ্বারা নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়’ মর্মে চিঠি দিয়ে তিন সদস্যর প্যানেল বাতিল করেন।

পরে আইন মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন নিকাহ রেজিস্ট্রারের প্যানেলে এক নম্বর ক্রমিকে থাকা আয়েশা সিদ্দিকা।

রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠি কেন বাতিল করা হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেছিলেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন।

জেইউ/ওএফ