ভোরপ্রিয় মানুষের পদচারণায় মুখরিত বোটানিক্যাল
‘আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম-বাগে উঠব আমি ডাকি’-
ভোরপ্রিয় এসব মানুষের পদচারণায় ঘুম ভাঙে শহরের অনেক পার্ক, লেক, উদ্যানের। মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেন তার মধ্যে অন্যতম। রাজধানীর অনেক মানুষ দিনের প্রথম আলোর ছোঁয়া নেয় এখানে। ঘাসের ডগায় জমা শিশির ছুঁয়ে বুক ভরে নেয় তাজা অক্সিজেন। মুখরিত সকালে শরীর চর্চায় ব্যস্ত হন স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিকেরা।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেনে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে।
করোনা পরিস্থিতিতে বোটানিক্যালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তাদের একজন মো. তারেক। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই ভোর ভোর এখানে হাজির হই। শরীরচর্চার পাশাপাশি এখানেই নির্মল প্রকৃতি, বিশুদ্ধ বাতাসে শুদ্ধ হয় হৃদয়।
আকাশ নামে এক কিশোর বলেন, শীতের সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখতে এখানে আসি। এখানে হাঁটতেও অনেক ভালোলাগে। শারীরিক-মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য সকালের ব্যায়ামের গুরুত্ব অনেক।
মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, শরীরের পাশাপাশি মনকে আরও কর্মোপযোগী করতে সকালে ব্যায়াম করতে আসি। আমি প্রতিদিনই আসি। করোনার কারণে মাঝে কয়েকদিন বন্ধ ছিল, তবে পরবর্তী সময়ে বিশেষ পাস নিয়ে এখানে সকালে ব্যায়াম করতে আসি।
তিনি বলেন, মেডিটেশনের ফলে মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হয়। জীবনের গ্লানি আর হতাশাকে মুছে দিতে এখানে তাই মেডিটেশন চলে। এছাড়া প্রকৃতির সঙ্গে মেশার কোনো বিকল্প নেই। তাই ঘুম থেকে উঠেই এসে পড়ি এখানে।
বয়স্ক আবদুল জলিল বলেন, সুস্থ দেহ আর মননে সমৃদ্ধশালী হতে হলে শরীরচর্চা করতে হবে। এখানে অনেকে মিলে একসঙ্গে সেটা করতে পারি। আমরা এখানে প্রতিদিন ঘন্টখানেক সময় যোগব্যায়াম করি।
তিনি আরও বলেন, সকালের এই সময়টুকু সারাদিনের কর্মশক্তিকে বাড়িয়ে দেয়। জীবন হয়ে ওঠে আরও সুন্দর, গতিশীল।
তরুণ প্রজন্ম ঘুমকাতুরে না হয়ে যদি একটু আড়মোড়া ভাঙে, একবার এখানে এসে দাঁড়ায়- তাহলে গাছের সবুজ পাতা, ঘাসের ডগায় জমা শিশিরবিন্দু আর পাখির কূজনের মতোই জীবন হবে স্নিগ্ধ-সুরেলা।
রাজধানী ঢাকার ভেতর বেড়ানোর জন্য নির্মল স্থান এই জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন। বাংলাদেশের একমাত্র জীবন্ত উদ্ভিদ সংগ্রহশালা এই বাগানে বর্তমানে ২০ টাকায় টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়। ২০৮ একর জায়গার ওপর এই উদ্যানে রয়েছে ৮০০ প্রজাতির বিভিন্ন গাছ-গাছালি।
বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহার্য দুর্লভ, বিদেশি ও প্রয়োজনীয় গাছগাছালির এ বাগান ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ উদ্যানে দেশি-বিদেশি, দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এদের মধ্যে বাঁশপাতা, চন্দন, রাজা অশোক, ক্যামেলিয়া, আমাজান লিলি, আগর, রামবুটাম, তমাল, ভূর্জপত্র, উদল, স্টারকুলিয়া, ক্যাকটাস, অর্কিড অন্যতম। এছাড়াও রয়েছে নানা প্রজাতির বাঁশ বাগান, গজারি বন, পাম বাগান, মেডিসিনাল বাগান, ফল বাগান, ধাঁধা হেজ, বটবৃক্ষ প্রভৃতি। এছাড়া বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশেই রয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানা।
এসআর/এইচকে