চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে হাসপাতালের আইসিইউগুলো সবসময় রোগীতে পূর্ণ থাকে। এছাড়া সাধারণ শয্যাগুলোতে করোনা রোগীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগীকেই অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।

এতদিন হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালগুলোতো বাইপ্যাপ (বাইলেভেল পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার) মেশিন ব্যবহার করে করোনা রোগীদের সেবা দেওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যে মেশিন দিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালে ১১টি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪টি বাইপ্যাপ মেশিন চালু আছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেনারেল হাসপাতালে আমরা ১১টি বাইপ্যাপ মেশিন দিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এটা ব্যবহারে করোনা রোগীদের কম অক্সিজেনই ভালো কাজ করে। মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন দিয়েই রোগীরা ভালো সাপোর্ট পায়। অক্সিজেন লাইন থেকে এ অক্সিজেন সহজেই সরবরাহ করা যায়। যেখানে হাই ফ্লো ন্যাজেল ক্যানোলাতে ৭০ থেকে ৮০ লিটার অক্সিজেন লাগে, সেখানে বাইপ্যাপ মেশিন দিয়ে ভালোভাবে কাজ করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, এখন করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এগুলো বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী দিতে চাইলে আমরা এগুলোর কথা বলি। এছাড়া মন্ত্রণালয়ে আমরা আবেদন করছি, চট্টগ্রাম এগুলোর বেশি বরাদ্ধ দেওয়ার জন্য। আমরা এ মেশিন গুলো উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছি।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার পাশাপাশি বাইপ্যাপ মেশিনের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে ভাবছেন তারা। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাইপ্যাপ সচল আছে চারটি ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১১টি। এছাড়া আরও ৩০টি বাইপ্যাপ মেশিনের চাহিদাপত্র ঢাকায় পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিগগিরই এ মেশিন হাতে পাওয়া যাবে বলে আশা করছে তারা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানোলার মতই একটি ডিভাইস। হাই ফ্লো থেকে সুবিধা বেশি বাইপ্যাপে। হাই ফ্লোতে অনেক অক্সিজেন লাগে। হাই ফ্লোতে একজনকে যে পরিমাণ অক্সিজেন দেওয়া যায়, সেই পরিমাণ অক্সিজেন দিয়ে বাইপ্যাপ মেশিনে চারজনকে দেওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, আমরাসহ অন্যান্য হাসপাতালে করোনা রোগীদের অক্সিজেন দেওয়ার ক্ষেত্রে বাইপ্যাপের ওপর জোর দিচ্ছে। এগুলো বেশি করে ব্যবহারের চিন্তা করতেছি। মন্ত্রণালয়ে ৩০টি বাইপ্যাপ চেয়েছি। এখনও পায়নি, তবে শিগগিরই পাবো বলে আশা করি। 

তিনি আরও বলেন, এগুলোর ব্যবহার বাড়লে অক্সিজেনের ওপর চাপ কমবে। আইসিইউতে তখন আরও বেশি রোগীকে সার্ভিস দিতে পারব।

তিনি বলেন, বাইপ্যাপ দিয়ে কম চাপের অক্সিজেন দিয়েও অনেক বেশি মানুষকে অক্সিজেন দেওয়া যায়। বাইপ্যাপ হাতে চলে আসলে হাই ফ্লো এর ওপর চাপ কমে আসবে। ২০টি বাইপ্যাপ মেশিন থাকলে অনেক রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া যাবে।

জানা গেছে, বাইপ্যাপ মেশিন ব্যবহার করে রোগীকে মিনিটে ১৫ থেকে ২০ লিটার প্রেসারে অক্সিজেন সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে। ফলে এই মেশিন ব্যবহার বাড়ানো গেলে অক্সিজেন প্ল্যান্টের ওপর প্রেসার কমার পাশাপাশি বেশি সংখ্যক রোগীকে সেবা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

কেএম/এসএম