নিরপরাধ মিনুর জেলখাটা : আদালতে কুলসুমীর স্বীকারোক্তি
চট্টগ্রামে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বহুল আলোচিত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি।
রোববার (১ আগস্ট) চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমী সম্পূর্ণ ঘটনার বিষয়ে আজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নূর আলম কাওয়াল ও শাহাদাত হোসেন নামে আরও দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে বিনা অপরাধে মিনু আক্তারকে জেলখাটানোর ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া কুলসুম আক্তারসহ অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে গত ২৯ জুলাই কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে। এরপর এই মামলায় কুলসুমকে দুই দিনের রিমান্ডে আনা হয়। গত ২৮ জুলাই রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কুলসুম ও মর্জিনাকে ইপিজেড এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসামি কুলসুম ও মর্জিনা দুই দিনের রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। পাশাপাশি তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নূর আলম কাওয়াল ও শাহাদাত হোসেন নামে আরও দুই জনকে শনিবার দিনগত রাতে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কুলসুম আক্তার হত্যা মামলায় এক বছর চার মাস কারাভোগ শেষে জামিনে বের হন। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর আদালতে হাজিরা দেন। পরে ২০১৭ সালের নভেম্বরে হত্যা মামলাটির রায় হয়। রায়ে কুলসুম আক্তার কুলসুমীর যাবজ্জীবন সাজার আদেশ হয়। যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় কুলসুমা আক্তার বিষয়টি নিয়ে আসামি মর্জিনা বেগমের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেই সঙ্গে সাজা থেকে বাঁচার জন্য মর্জিনার সহযোগিতা চান। এরপর মর্জিনা বিষয়টি নিয়ে আসামি মো. শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করে। শাহাদাত হোসেন কুলসুমকে বাঁচানোর জন্য মো. নূর আলম কাওয়ালের সঙ্গে আলোচনা করে। তারা মর্জিনাকে জানায় এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলে কুলসুমের পরিবর্তে আরেকজনকে জেলখানায় পাঠানো যাবে। কুলসুম বিষয়টি জানতে পেরে এক কথায় রাজি হয়ে যায়।
এরপর মর্জিনা ও সহযোগীরা মিলে মিনু বেগমকে টাকার লোভ দেখায়। এছাড়া এক মাসের মধ্যে জামিন করিয়ে দেবে বলেও তার সঙ্গে মৌখিক চুক্তি করে। সেই অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১২ জুন মিনুকে কুলসুম সাজিয়ে আদালতে পাঠায় তারা। আদালতে হাজিরার দিনে আসামি মো. শাহাদাত হোসেন ও মর্জিনা বেগম মিনুকে কুলসুম সাজিয়ে নিয়ে যায়।
পরে মিনু জেলখানায় যাওয়ার পর আসামি মো. শাহাদাত হোসেন ও নূর আলম কাওয়াল মর্জিনা বেগমের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। মর্জিনা ও কুলসুম আক্তার টাকা যোগাড় করতে না পেরে কালক্ষেপণ করতে থাকে। টাকা আদায় নিয়ে ছলিমপুর এলাকায় সালিশি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এরই একপর্যায়ে মর্জিনা এবং কুলসুম আক্তার টাকা দিতে না পেরে ইপিজেড এলাকায় আত্মগোপন করে। এরপর আসামি মো. শাহাদাত হোসেন ও নূর আলম কাওয়াল ছিন্নমূল এলাকায় কুলসুম আক্তার কুলসুমী ও মর্জিনা বেগমের ২টি প্লট জোরপূর্বক দখল করে।
উল্লেখ্য, নিরপরাধ মিনু বেগম জামিন পেয়ে গত ২৮ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।
কেএম/জেডএস