রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ঢাকার বাইরে থেকে রোগী আসছেন

দেশে কারোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলছে। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। অধিকাংশ রোগীই করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ডেল্টায় আক্রান্ত হওয়ায় দ্রুত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

শহর থেকে করোনা এখন গ্রামমুখী। আইসিইউর প্রত্যাশায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে করোনা রোগী আসছেন ঢাকায়। কিন্তু হাসপাতালে এসে দেখছেন কোনো আইসিইউ খালি নেই। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় রোগীকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে ছোটাছুটি করছেন স্বজনরা।

এছাড়া হাসপাতালে আগে থেকে সাধারণ বেডে ভর্তি রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হলে তারা তা পাচ্ছেন না। ফলে ভর্তি রোগীকে হাসপাতালে রেখে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। 

শনিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এ চিত্র দেখা গেছে। 

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

হাসপাতালটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে  অ্যাম্বুলেন্সে আইসিইউর প্রত্যাশায় করোনা রোগীরা ঢাকার বাইরে থেকে আসছেন। এসে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখছেন আইসিইউ নেই। পরে রোগীকে নিয়ে অন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন আইসিইউর জন্য। এছাড়া ঢাকার ভেতরের বাসিন্দারাও করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউর খোঁজ করে ফিরে যাচ্ছেন কুর্মিটোলা থেকে।

ঢাকার বাইরে থেকে আসা করোনা রোগীদের স্বজনরা জানান, অবস্থা গুরুতর বলেই রোগী ঢাকায় আনা হচ্ছে। অধিকাংশ রোগীরই আইসিইউ প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকায় এসে তাদের হতাশ হতে হচ্ছে। অধিকাংশ হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় তাদের ফিরে যেতে হচ্ছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা থেকে হরলাল দাস তার ভাইকে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলনে, জেলা শহরে কোনো চিকিৎসা নেই। সেখানের ডাক্তাররা বলেছে আইসিইউ লাগবে। তাই ঢাকায় এই হাসপাতালে এসেছিলাম। কিন্তু এখানেও আইসিইউ নেই। এখন মুগদা হাসপাতালে যাব। দেখি- যদি খালি পাই। আমার ভাই ৮ দিন ধরে করোনায় ভুগছে, এখন অবস্থা খুব খারাপ।

এদিকে, সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালটিতে ভর্তি করোনা রোগীরাও পাচ্ছেন না আইসিইউ। তাদের স্বজনরা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চষে বেড়াচ্ছেন আইসিইউর জন্য। কিন্তু কোথাও আইসিইউ পাচ্ছেন না।

গত সপ্তাহে আসমা বেগম করোনা আক্রান্ত হয়ে হবিগঞ্জ থেকে কুর্মিটোলায় ভর্তি হয়েছেন। তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। স্বজনরা মনে করছেন, তাকে দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু কুর্মিটোলা হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় তারা পড়েছেন বিপাকে। 

আসমা বেগমের মেয়ে প্রাচী হক জানান, বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাত থেকে তার মায়ের অবস্থা খারাপ। তিনি ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারছেন না। কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় তার মা কোভিডের স্বাভাবিক বেডে থেকেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে আজ সকালে তার বাবা আইসিইউর খোঁজে বের হয়েছেন। কোনো হাসপাতালে আইসিইউ খালি পেলে তাকে সেখানে নিয়ে যাবেন।

এদিকে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে কোভিড রোগী ভর্তি করার সক্ষমতা ৩০০। বর্তমানে খালি রয়েছে ৮৯টি বেড। আইসিইউ সংখ্যা ১০টি, কিন্তু বর্তমানে কোনো আইসিইউ খালি নেই। এছাড়া হাসপাতালটিতে করোনা চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ৪৩৯টি, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ৫৭টি ও অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটরের সংখ্যা ৩০টি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালটির এক কর্মকর্তা বলেন, কয়েকদিন আগে হাসপাতালে করোনা রোগীতে একদম পরিপূর্ণ ছিল। এখন অবশ্য ৮৯টি বেড খালি রয়েছে। তবে কোনো আইসিইউ খালি নেই। এখন যত রোগী আসছেন তাদের অধিকাংশই আইসিইউর জন্য আসছেন। কিন্তু খালি না থাকায় তাদের ফিরিয়ে দিতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। এছাড়া হাসপাতালে আগে থেকে ভর্তি যেসব রোগী সাধারণ বেডে রয়েছেন তাদের দরকার হলে আইসিইউতে নিতে পারছি না। 

এমএসি/এইচকে